মাটিরাঙ্গায় তীব্র রোদ উপেক্ষা করে বোরো ধান কাটার ধুম

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কষ্টার্জিত ধান কর্তনে মাঠে মাঠে কৃষকের ঘাম ঝরছে। বোরো ধানের বাম্পার ফলনে ফসলের মাঠে ফুটে উঠেছে কৃষকের হাসি। কিন্তু কৃষকের এই হাসির আড়ালে দুশ্চিন্তাও লুকিয়ে রয়েছে। কারণ, সামনে কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় চিন্তিত তারা। তবে এসব না হলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন কৃষকরা এমনটাই আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় তীব্র রোদ উপেক্ষা করে চলছে বোরো ধান কাটার ধুম। বর্তমানে আগাম জাতের ধান কাটছেন কৃষকরা। অন্য জাতের ধানও সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব জাতের ধান কাটবেন তারা। তবে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনে ফসলের মাঠে ফুটে উঠবে কৃষকের হাসি।

মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ফসলের মাঠে যেদিকেই তাকানো হয় সেদিকেই কেবল সোনালি ধানের সমারোহ। রোদ আর হালকা বাতাসে ফসলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। মাঠ গুলোতে ধান সবুজ বর্ণ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে।

শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর কৃষকরা বোরো ধানের ভালো ফলনের আশা করছেন। তবে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে কিছু কিছু ফসলের মাঠের ধান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে।

এদিকে প্রছন্ড রোদে ধান কাটতে কষ্ট হচ্চে কৃষকদের, মাথায় গামছা বেঁধে ধান কাটছেন তারা।তাছাড়া ক্রমাগত দ্রব্রমূল্যের ঊধ্বগতির কারণে বাড়ছে ধান কাটা শ্রমিকের দাম। পুরষ শ্রমিক দিনে ৬০০ টাকা করে কাজ করে থাকেন। তাছাড়া শ্রমিকের দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে পাহাড়ী নারী শ্রমিকের কদর মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রায় সকল স্থানে পাহাড়ী নারী কর্তৃক ধান কাটতে দেখা যায়। তাদের দিয়ে কম দামে কাজ করা যায় যায় বিধায় সকলে এসব নারী শ্রমিকের দিকে ঝুঁকছেন। এজকন নারী পাহাড়ী শ্রমিক কে ৪০০ টাকায় সারাদিন কাজ করানো যায়। এজন্য পাহাড়ে বর্তমানে পাহাড়ী নারী শ্রমিকদের বেশ চাহিদা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় উফশী জাতের ধান আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৮৪০ হেক্টর জমি। আবাদের অগ্রগতি নির্ধারন করা হয় ৮৪২ হেক্টর জমি। সম্ভাব্য উৎপাদন ৪৩৮৭.৪০ মেট্রিক টন।

হাইব্রিড আবাদের লক্ষমাত্রা ১০৭০ হেক্টর জমি। আবাদের অগ্রগতি ১০৮৩ হেক্টর জমি। সম্ভাব্য উৎপাদন ৭০৮১.৮০ মেট্রিক টন। আবাদকৃত মোট জমির পরিমান ১৯১০ হেক্টর জমি। কর্তনকৃত মোট জমির পরিমান ১৯১৫ হেক্টর। মোট উৎপাদন ১১৪৬০.২ মেট্রিক টন ধান।

NewsDetails_03

গত (২০২১-২২) অর্থবছরে উফশী জাতের ধান আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৮৩৮ হেক্টর জমি। কর্তনকৃত জমির পরিমান ৮৩৮ হেক্টর। মোট উৎপাদন ৬৯৭৬.৩৫ হেক্টর। হাইব্রিড আবাদের লক্ষমাত্রা ১৩৩৫ হেক্টর জমি। আবাদের অগ্রগতি ১২৬২ হেক্টর জমি। সম্ভাব্য উৎপাদন ৮৭২৬.৭৩ মেট্রিক টন। আবাদকৃত মোট জমির পরিমান ২১৯৩ হেক্টর। কর্তনকৃত মোট জমির পরিমান ২১০০ হেক্টর। মোট উৎপাদন ১৫৭৩৭.৭৪ মেট্রিক টন।

গত অর্থ বছরের তুলনায় এ বছর লক্ষমাত্রা উৎপাদন কমেছে ২৮৩ হেক্টর জমি। তাছাড়া প্রায় ৪২৭৭.৫৪ মেট্রিকটন ধান কম উৎপাদন হবে বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, তাছাড়াকিছু কিছু জমিতে ভুট্রা চাষ করা হয়েছে এবং পানি সেচের অভাবে কারনে জমি আবাদ করা হয় নি।

কৃষি অফিস আরো জানায়, প্রতি ইউনিয়নে ৩জন করে ৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় মোট ২২ জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এ বছর মাটিরাঙ্গা উপজেলায় উফশী জাতের ১৭টি ধানের জাত এবং হাইব্রিড জাতের ১৯টি ধানের বীজ আবাদ করেছেন কৃষক।

রামশিড়ার কৃষক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমি এবার ১শত শতক জমিতে উফশী জাতের ধান চাষ করেছি, ফলন ভাল হলে ৬০ মন ধান পাব আশা করছি।

চড়পাড়ার আরেক বোরো চাষি রফিক মিয়া বলেন, আমি ৮০শতক জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। এ বছর পোকার আক্রমন কম ছিল তাই ভাল ফল আশা করছি। তবে ৪০ /৫০ মন ধান গোলায় তুলতে পারবো।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, অনুকূল আবাহাওয়ায় এ বছর ধান উৎপাদন ভাল হয়েছে। এছাড়াও চলতি মৌসুমে ধানের রোগবালাইও কম। আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা তাদের ফসল কাটতে পারবেন। সে পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকলে উপজেলার কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছি।

ধান চাষের জন্য কৃষকের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ সরকারি প্রণোদনার আওতায় বিভিন্ন ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ধান চাষে কৃষকদের বিনামূল্যে সার বিতরন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন