লামায় ঔষধীগুন সম্পন্ন চিয়া বীজ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

NewsDetails_01

মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ হচ্ছে ‘চিয়া’। ঔষধি গুণসম্পন্ন এ ‘চিয়া’ বীজ একসময় শুধু মেক্সিকো ও আমেরিকার চাষ হতো। এবারই প্রথম তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকার মধুঝিরি গ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে চিয়া চাষ শুরু করা হয়।

বেসরকারী সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের এগ্রো ইকোলজি প্রকল্প-২ এর মাঠ কর্মকর্তা মো. মামুন সিকদারের উদ্বুদ্ধকরণে কৃষক মোহর আলী ২০ শতক জমিতে এ ‘চিয়া’ চাষ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। তাই কৃষক মোহর আলী এখন তামাকের চেয়ে তিনগুন লাভের স্বপ্ন দেখছেন এ ‘চিয়া’ চাষে। ‘চিয়া’ চাষে তিনগুন লাভ হওয়ায় শুধু কৃষক মোহর আলী নয়, আশপাশের অন্যসব কৃষকও এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পরিবেশ বান্ধব সম্ভাবনাময়ী এ চাষাবাদ বান্দরবান জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমদানী ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কৃষকরা বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

জানা যায়, ‘চিয়া’ সীডের আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসীরা খাদ্যতালিকায় থাকা চিয়া বীজকে সোনার থেকেও মূল্যবান বলে মনে করতেন। অতীতে মায়া সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ খাবার ছিল ‘চিয়া’ বীজ। বর্তমানে চিয়া সিড শুধু ওজন কমানোর জন্য বা ডায়েটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না, নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে ‘চিয়া’ সিড সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মানো ‘চিয়া’ বীজ দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট হয়ে থাকে। ‘চিয়া’ সাধারণত তিন মাসের ফসল। এর আয়ুকাল ৯০ থেকে ১০০ দিন। বছরের অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। ২০ শতকে মাত্র ৬০০শ গ্রাম বীজ লাগে। চাষের পদ্ধতি খুব সহজ। তেমন একটা যতœ নিতে হয়না। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মেহেদী মাসুদ কানাডা থেকে প্রথম ‘চিয়া’ বীজ দেশে আনেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন কৃষক মনহোর আলীর ‘চিয়া’ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শতক জমিতে ‘চিয়া’ বীজের চাষাবাদ করেছেন। এতে সর্বমোট খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে এ জমিতে গাছ বড় হয়ে ফুল ও ফল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ‘চিয়া’ বীজ উৎপাদনের আশা করছেন কৃষক মোহর আলী। তিনি বলেন, খাবার গুণের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে ‘চিয়া’ চাষ করি। প্রথম অবস্থায় বাজারজাত নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু এখন জমি থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। অগ্রিম ‘চিয়া’ বীজ কিনতে চাচ্ছেন আশপাশের কৃষকরা। প্রতি কেজি ‘চিয়া’ সিড প্রায় ১২০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে।

NewsDetails_03

তিনি আরও বলেন, এই শস্যে কোনো রোগ নেই। তাছাড়া তুলনামূলকভাবে তামাকের চেয়ে অনেকগুন বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি। আমার ২০ শতক জমিতে প্রায় ১২০ কেজি ‘চিয়া’ বীজ পাওয়া যাবে। যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হবে ১ লক্ষ টাকা।

অন্যদিকে একই পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ করলে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে উৎপাদিত তামাক বিক্রি করে পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা।
রুপসীপাড়া ইউনিয়নের শীলেরতুয়া পাড়ার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগামী মৌসুমে আমিও চিয়া চাষ করবো। তাই কৃষক মনহোর আলীর কাছে ১ কেজি চিয়া বীজের অর্ডার করছি।

এদিকে কারিতাস এগ্রো ইকোলজি প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মো. মামুন সিকদার জানান, ২০ শতকের জমিতে মাত্র ৬০০ গ্রাম বীজ লাগে। চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ। প্রয়োজন অনুপাতে ২-৩ বার সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হয়। যেকোনো চাষী বা কৃষক এটি চাষ করতে পারবেন। প্রতি বিঘা জমিতে সব মিলে খরচ হবে মাত্র সাত হাজার টাকা। পতিত জমি ও ছোট বাগানের জমিতে চাষ করা যায়। এক হাজার টাকা বাজারদরে উৎপাদিত চিয়া বিঘাপ্রতি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। যা তামাকের তুলনায় তিনগুন লাভঅ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাইন উদ্দীন মোরর্শেদ জানান, সুপার ফুড ‘চিয়া’ দেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী, ওজন কমানো, রক্তে সুগার স্বাভাবিক রাখা এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন জানায়, এ চাষ ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমদানী ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কৃষকরা বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুন