সন্দেহের দোলাচলে কেএনএফ-শান্তি কমিটির শান্তি উদ্যোগ

NewsDetails_01

অবিশ্বাস, সন্দেহ ও আস্থার সংকটের কারনে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সশরীরে বৈঠক দফায় দফায় বাতিল করার ফলে জেলার চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সংকট নিরসন হবে কিনা জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আর এ নিয়ে এস বাসু দাশ এর বিশেষ প্রতিবেদন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুন পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষে পরিষদ চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্যশৈহ্লা শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করে। গত ১৯ জুলাই, ৪ আগষ্ট, ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক স্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ সদস্য ও ভার্চুয়ালি কেএনএফের ৪ সদস্য বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠকে অপহরণ, হত্যা ও চলমান সংকট নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়। গত ৫ অক্টোবর প্রথম দফায় রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের আরথাহ্ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সশরীরে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়, পরে সোমবার (২৩ অক্টোবর) বৈঠক করার কথা থাকলেও গত রবিবার মধ্যরাতে কেএনএফ এই বৈঠক বাতিল করে দেয়।

এই বিষয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারনে বারবার বৈঠক বাতিল করা হয়েছে, আমরা বৈঠক করতে সব সময় প্রস্তুত আছি।

আরো জানা গেছে, কেএনএফ এর সংঘাতময় পরিস্থিতির কারনে গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে জেলায় পর্যটক যাতায়তে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি ও পরে প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন। গত বছরের ১৫ নভেম্বরের পর ১৩২ টি পরিবারের ৫৪৮ জন ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নেয়। গত ২৮ জানুয়ারি রুমা সদরে ১৪০ মারমা নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় গ্রহন করলেও তারা গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় ফিরে যায়। ১০ মার্চ রাঙামাটির বিলাইছড়ির ৪নং বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এর ৩টি পাড়া থেকে ৫৬ পরিবারের ২২০জন তংচঙ্গ্যা রেইছা ও রোয়াংছড়ি সদরে আশ্রয় গ্রহন করে। এই ঘটনায় ৫ সেনা সদস্য নিহত ও কেএনএফ সদস্যসহ নিহত হয় আরো ১৬ জন, অপহরণের শিকার হয় অন্তত ২০ জন। এর ফলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ধস ও জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করে।

অন্যদিকে কেএনএফ এর সাথে জঙ্গী সংগঠনের যোগসাজস আছে দাবী করে যৌথ বাহিনী জানায়, এই সময়ে পাহাড়ে অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জন জঙ্গী ও কেএনএফ এর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়, এসময় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

NewsDetails_03

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির অপর সদস্য উজ্জল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বৈঠকে বসার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি ছিলো, শেষ মুহুর্তে গত সোমবার মধ্যরাতে কেএনএফ আমাদের জানায় বৈঠক হবেনা, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই বৈঠক আর হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেএনএফ এর একটি অংশ বৈঠকে বসে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আগ্রহ থাকলে অপর একটি পক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে বিরোধীতা করছে। রুমার বেথেল পাড়ার সাবেক মেম্বার সাপথন বমের মেয়ে জামাই মেজর লালরামতিলং বম এর নেতৃত্বে কেএনএফ এর অংশটি খুব তাড়াতাড়ি সংলাপে বসে আত্মসমার্পনে ইচ্ছুক হলেও অপর অংশটি শান্তি প্রক্রিয়া বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে, যার কারনে বারবার কেএনএফ এর পক্ষ থেকে বৈঠক বাতিল করা হচ্ছে।

রুমার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উহ্লা মং মার্মা জানান, এলাকার সবাই চায় দ্রুত বৈঠক হোক, এলাকায় ফের শান্তি ফিরে আসুক, আমরা জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ আগের মতো শান্তিতে থাকবো।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসে ভারতের মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের জাতিগত দাঙ্গা ও সহিংসতার কুকি ও মাইতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত শুরু হলে জেলা থেকে মিজোরামে আশ্রয় গ্রহন করা কুকি (বম সম্প্রদায়) শরনার্থীরা কেএনএফ প্রধান নাথান বম এর উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে নিজেদের আবাস ভূমিতে ফিরতে। অন্যদিকে ভারতের জাতিগত এই সংঘাতে অস্ত্রের যোগান, চিকিৎসা ও খাদ্য সংকটের কারনে কোন্দল দেখা দেয় সংগঠনটিতে।

শান্তি প্রক্রিয়ার বৈঠক প্রসঙ্গে কেএনএফ এর একজন মুখপত্র সিটিজেন পা ফোনে বলেন, সশরীরে বৈঠকের বিষয়ে আমাদের সিনিয়রা আপনার (প্রতিবেদক) সাথে কথা বলবে, পরে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, ২১ সালের ১৯ মে কেএনএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানছি, লামা ও আলিকদম নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়নসহ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রদান, প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিতকরণ এবং জেলা ও আঞ্চলিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যবস্থা থেকে পৃথকীকরণ করা সহ পাহাড় ও বনাঞ্চল সংরক্ষণার্থে “ইনার লাইন পারমিট” (আইএলপি) প্রণয়ন সহ সর্বশেষ ৩টি দাবি প্রদান করে।

আরও পড়ুন