সরকার ও কেএনএ’র সদস্যদের সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি

NewsDetails_01

পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) । আর এদের সশস্ত্র শাখা কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) । কেএনএফের দাবি অনুযায়ী বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও তাদের সংগঠনের সদস্য। এছাড়াও তারা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছে। আর সেই দাবিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়েছে কেএনএফ। সংঘাতে প্রাণ গেছে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য, সাধারণ জনগণ ও কেএনএফ সদস্যদের । পাহাড়ের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে প্রভাব পড়েছে পর্যটন ব্যবসায় । নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে স্থানীয় জনগণ, বন্ধ হয়ে গেছে জীবিকা নির্বাহ ।

তবে এবার পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠনে এ তথ্য জানানো হয়।

শান্তি কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
সংবাদ সম্মেলনে কেএনএ’র সকল সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার এবং কেএনএর সাথে সংলাপের উদ্যোগ করা ও সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর কারণে যে সমস্ত এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে সেসব এলাকায় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করাসহ পূর্ণবাসন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করায় কমিটির লক্ষ্য বলে জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজারবম, ধর্মীয় গুরু ও উপদেষ্ট রেভা:পাকসিমবয়তুং, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা সিংইয়ংম্রো, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু প্রমুখ।

NewsDetails_03

সংবাদ সম্মেলনে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা যা বললেন :
এছাড়াও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ। তিনি বলেন, কেএনএফ ও কেএনএ’র তৎপরতার কারণে বান্দরবানের বেশ কয়েকটি অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয়দের জনজীবন অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জীবনযাপনের জন্য সকল জীবিকার সকল পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বান্দরবানে দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ। এরইমধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয়দের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, হাতহতা হয়েছে কুকি চীনরাও।
তিনি আরো বলেন, কিছু বম জনগোষ্ঠীর বিপথগামী কিছু ছেলে মেয়েরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী পাংখোয়া, খ্যাং, ¤্রাে, বম, খুমি, লুসাই সহ অনেকে তাদের সাথে আছেন। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার পথে না গিয়ে সরাসারি অস্ত্র হাতে নেওয়ায় সমস্যাটি সংকটের রুপ নিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এর পরিবর্তন চাই। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়ে বম সোস্যাল কাউন্সিল এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শান্তি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি ।

কারা আছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিতে :
এদিকে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, মুখপাত্র ও সদস্য হিসেবে আছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও তঞ্চঙ্গ্যাঁ প্রতিনিধি কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ, সদস্য হিসেবে আছেন সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট বাসিংথুয়াই মার্মা। এছাড়াও সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সদস্য সচিব লালজারলম বম । সদস্য হিসেবে যারা আছেন- ধর্মীয় গুরু ও উপদেষ্টা রেভা:পাকসিমবয়তুং, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লালথাংজেম, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা সিংইয়ংম্রো, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো, বাংলাদেশ খুমী কল্যাণ এসোসিয়েশনের সভাপতি সিঅং খুমী, উপদেষ্টা লেলুং খুমী, বাংলাদেশ মারমা এসোসিয়েশন’র সভাপতি মংচিংনু মার্মা, খিয়াং প্রতিনিধি ও সাবেক বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ম্রাসা খিয়াং, খিয়াং প্রতিনিধি মানিক খিয়াং, ত্রিপুরা প্রতিনিধি কৃপা ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব কল্যাণ সংসদের সভাপতি রামবাদু ত্রিপুরা (স্টিভ), সাংবাকি ও চাকমা প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা এবং সাংবাদিক ও তঞ্চঙ্গ্যা প্রতিনিধি উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা।

কেএনএফের সাথে যোগাযোগ :

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেছেন, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সাথে কেএনএফের এরইমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। আমার মনে হয় তারাও পজেটিভ হিসেবে ডাকবে। তারা আমাদের সন্তান, আমাদের ভাই, পরিবার । তাদেরকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা রাখি।

এর আগে ২৯ মে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে অরুণ সারকি টাউন হলে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন, সংবাদকর্মী, মূলধারার নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ওই দিনই কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির দ্বারা সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা নিরসনে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে গত ৯ জুন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এর সভাকক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

আরও পড়ুন