আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান আবুল কালাম কিছুই করেনি। বান্দরবানের ভাইরাল হওয়া সেই ছবিটির ভিকটিম রুম পাও ম্রো’ সোমবার বিকালে জেলার আলীকদম উপজেলায় সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবী করেন।
সোমবার সাড়ে চারটায় ঘটনায় অভিযুক্ত আলীকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম এর বাস ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ম্রো নারীর ভাই মেন রুং ম্রো এমএনপি ( ম্রো ন্যাশনাল পার্টি)র কমান্ডার বোনকে সাথে নিয়ে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এর জন্য সে (রুম পাও ম্রো) অনেক কষ্ট করেছে, তাই খুশি হয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়েছে, এটা কোন খারাপ কাজ না। আবুল কালাম চেয়ারম্যান কোন অন্যায় করেনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ম্রো, চাকমা,মারমা,বাঙালী আমরা মিলেমিশে থাকি, বাইরের লোক (বান্দরবানের বাইরে) এই কাজে উস্কানি দিচ্ছে। এই ব্যাপারে আমরা কোন প্রতিবাদ করবোনা। এই ব্যাপারে আমাদের কোন অভিযোগ নাই। এসময় কয়েকজন ম্রো তরুণসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এই সময় রুম পাও ম্রো এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম এভাবে জড়িয়ে ধরেছে কিনা জানতে চাইলে আদিবাসী এই নারী বলেন. আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান কিছুই করেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার আলীকদমের মিরিনচর পাড়ায় চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রুমপাও ম্রো ফুলের মালা পড়িয়ে দিলে এই চেয়ারম্যান তার ফেসবুক আইডিতে ছবিগুলো প্রকাশ করলে তোলপাড় শুরু হয়।
রুম পাও ম্রো বলেন, আমার ছবিগুলো ভাইরাল করার পূর্বে অথবা মিডিয়াতে প্রকাশ এর পূর্বে আমার ও আমাদের পরিবারের বক্তব্য নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উক্ত ছবিগুলি ভাইরাল করা হয়। সাধারণত ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টি করে তৃপ্তি পায়।
প্রকাশিত চারটি ছবির বাইরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আরো কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, ম্রো নৃগোষ্ঠির এক নারীকে জনসম্মুখে জড়িয়ে ধরে আছেন। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট যে, তিনি এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। চেয়ারম্যান জোরপূর্বক এই আদিবাসী নারীকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ছবি নিয়ে কোন ধরণের অভিযোগ করেনি এই ম্রো নারীর পরিবার থেকে। শুরু থেকে এই দাবী করে আসছেন ম্রো নারীর পরিবারসহ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম।
এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, পাড়াবাসীর সংবর্ধনায় সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছি, তাঁরাও জড়িয়ে ধরেছেন, আমিও ধরেছি। এতে দোষের কিছু নেই।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে আলীকদম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা এই অশ্লিলতাহানীর বিচারের দাবীতে ইউএনও এর মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রদান করে জেলা প্রশাসকের কাছে।
প্রসঙ্গত, আলিকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ২০১০ সালের ৯ জুন আলীকদম উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমান ) শিরিনা আক্তার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। উপজেলা বিএনপির নেত্রী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এর মামলার কারনে সে সময়ে জেলা জুঁড়ে তোলপাড় শুরু হয়।