করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় বাইরে কাজে যেতে না পারায় আয়-রোজগার বন্ধ দিনমজুর, ভ্যান চালক, ছোট দোকানদার, ফেরিওয়ালা বা হকারের মতো শ্রমজীবী মানুষের । ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে দরিদ্র পরিবারগুলো । এসব অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছি ব্যক্তি ও সংগঠন । আর এনিয়ে সৈকত দাশ এর বিশেষ প্রতিবেদন।
বান্দরবান পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ নিজ উদ্যোগে চারশ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। চালের সঙ্গে দিয়েছেন ডাল, তেল, লবণ, আলু । এছাড়াও জেলার মুচি এবং পত্রিকার হকারদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন । এছাড়াও বান্দরবান জেলা সদরে নিজ খরচে প্রতিদিন ৪২ হাজার লিটার জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন ।
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কাজল কান্তি দাশ বলেন, এখন যাদের সামথ্য আছে তাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।
জেলার কর্মহীন অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন একদল তরুণ । তরুণেরা দিনমজুর, ভ্যান চালক, শ্রমজীবী হতদরিদ্র ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের এমনকি অভুক্ত পশুদের জন্য পাউরুটিসহ খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন । এর পাশাপাশি তাঁদের সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারও দেওয়া হচ্ছে ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ বিষয়ক সম্পাদক রবিন বাহাদুর এর নিজ উদ্যোগে দু:স্থ ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য ১ হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন । এছাড়াও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দু:স্থ ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করে পাঠানো হয়েছে চাল আর খাগড়াছড়িতে পাঠনো হয়েছে ৭শ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ বিষয়ক সম্পাদক রবিন বাহাদুর বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছি, এই ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখব ।
চায়ের দোকানে বসেই আসিফ আকবর আর রানা চৌধুরী দুই বন্ধুর আড্ডা। আড্ডায় উঠে আসে অসহায় মানুষদের সহায়তার কথা, কারো তেমন অর্থ নেই। দুই জনে মিলে প্রথমেই কিনেন ১০ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রী। সহায়তা দিলেন কর্মহীন অসহায়দের । চোখের সামনে যাকে অসহায় ও অসচ্ছল মনে হয়েছে, তাকে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী । এভাবে দিলেন ৮শ ২০ জনকে ।

রানা চৌধুরী বলেন,আমার তেমন টাকা পয়সা নেই, এরপরও করোনার এই সংকটের সময়ে অসহায় মানুষদের খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দিতে ভালো লাগে ।
করোনায় বিপন্ন মানুষের সহায়তায় নিরবে এগিয়ে আসছেন অনেকে। তাতে কেউ কেউ হয়ত নানা উপায়ে সহায়তা পাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দরিদ্রদের সাহায্য করছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে কথা চিন্তা করে তাদের সহযোগিতায় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বান্দরবান করোনা স্বেচ্ছাসেবক, বান্দরবান পরিবার, দু-মুঠো অন্ন নামের ফেসবুক গ্রুপ। যারা মূলত ফেসবুক গ্রুপ খুলে বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগিতায় ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
উপার্জন কমে যাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও কষ্টে আছেন। লোকলজ্জার কারণে তারা কারো কাছে তা প্রকাশ করতে পারছেন না। এমন সব মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এসব সংগঠন ।
সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক এ্যাডভোকেট ইকবাল করিম বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুস্থ ব্যক্তিদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। আর আমরা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছি । এরই মধ্যে সদরের তিনটি ওয়ার্ডের প্রায় ৪শ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। আরো ৪শ পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট প্রস্তুত করে রেখেছি ।
তিনি আরো বলেন, তহবিলে যতদিন অর্থ থাকবে ততদিন আমরা এই সাহায্য অব্যাহত রাখব । এছাড়াও বান্দরবান সদর ছাড়াও উপজেলাগুলোতেও খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেয়ার চিন্তা ভাবনা আছে ।
মানসিক ভারসাম্যহীনদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন যুবকরাও। রাতের আধাঁরে সাত যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ও প্রতিবন্ধীদের খুঁজে বের করে দিচ্ছেন খাদ্য। শিমুল দাশ, মবীনুল ইসলাম জিকু, রিজভী রাহাত, মো: আইয়ুবসহ ৭ যুবক মানসিক ভারসাম্যহীনদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন । এদের মতো জেলার ৭টি উপজেলায় অসংখ্য তরুণ নিরবে কাজ করছে যা অনেকের অজানা।
তাদের মধ্যে শিমুল দাশ বলেন, ওরাওতো আমাদের মতো মানুষ, করোনার কারণে চারদিকে দোকান পাঠ বন্ধ । তাই আগের মত কারো দেয়া খাবার তারা পায় না । প্রথম দিন যখন খাবার দিয়েছিলাম তাদের সামনে, তখন খুব তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তারা বেশ ক্ষুধার্ত । কেউ আগে এসে তাদের কোন খাবার দেয়নি।