দাম বেশি হলেও ইফতারের চাহিদা মেটাতে মৌসুমী ফলই ভরসা

NewsDetails_01

বেড়েছে ফলের চাহিদা, লাফিয়ে বাড়ছে দামও, চৈত্রের খরতাপে যখন রোজাদারদের প্রাণ শুকিয়ে যায় ঠিক তখনী এক গ্লাস ফলের রস ই নিজেদের শরীর কে সতেজ করে তুলে। দাম বেশি হলেও শরীর সতেজ রাখতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ফলের দিকে ঝুঁকছেন। ইফতারের চাহিদা মেটাতে ফলই একমাত্র ভরসা। গরমের তীব্রতায় ইফতারের মেন্যুতে ফলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে লাফিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে ফলের বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

১৪ ঘন্টারও বেশি সময় রোজা রাখার পর দিন শেষে ভাজাপোড়া ইফতার পরিহার করছেন বেশিরভাগ রোজাদারই। অনেকেই ঝুঁকছেন মৌসুমী ফলের দিকে। তাই বিকেল হতেই ফলের বাজারে ভিড় বাড়ছে। বলা হয়, ফলমূল দিয়ে সাজানো প্লেটই আদর্শ ইফতার। কিন্তু স্বস্তি নেই ফলের বাজারেও। দাম কিছুটা বেশি হলেও উপায় নেই।

আজ শনিবার ৯ এপ্রিল সকাল থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে দেখা যায়, বাহারী ধরণের ফলের সমাহার বাজারে। দাম একটু বেশি হলেও চাহিদানুযায়ী এবং ক্রয়ক্ষমতানুসারে সকল দামের ফলে কিনতে পারেন সকলে।

তরমুজ, আনারস, পেঁপে, কলা, ভাঙ্গি, বেল এ সময়ের বেশ জনপ্রিয় রসালো ফল। গতবার রোজায় লিচু থাকলেও এবার জনপ্রিয় এ ফলটির দেখা মিলবে না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ করে নিমসার, সুবর্ণচর, চট্রগ্রাম, মিররসরাই এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ফল বাজারে সয়লাব। মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার স্থায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা মৌসুমী এসব ফলের ব্যাবসা করে সিজনে লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন।

বাঙ্গি কে চট্রগ্রামের ভাষায় স্থানীয়রা ফুট বল্লেও নোয়াখালী বা কুমিল্লা অঞ্চলের লোকজনের মুখে ভাঙ্গি বলেই পরিচিত ফলটি, বালু বালু স্বভাবের ভাঙ্গি বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে, মিষ্টি সহনীয় বিধায় অনেকের কাছে ফলটি বেশ জনপ্রিয়। বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ।

এছাড়াও এই ফলের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম। বাঙ্গি মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে শরীরের অবসাদ ভাব দূর করে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি। নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়। তাছাড়া এই ফলে নেই কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল। তাই বাঙ্গি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই একেবারেই। এজন্য রোজাতে এটির বেশ চাহিদা রয়েছে।

প্রতিটি ভাঙ্গীর দাম আকার অনুযায়ী ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। মাটিরাঙ্গায় যে সব ভাঙ্গি বিক্রি করা হয় সব নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে অত্র এলাকার ফল ব্যাবসায়ীরা পাইকারি দরে ক্রয় করে খুচরা বাজারে বিক্রি করে থাকেন প্রতিটি ফলে তারা অল্প ব্যাবসা করেন বলে জানান, মাটিরাঙ্গা বাজারের বাঙ্গী ব্যাবসায়ী মো: জামাল হোসেন।

তিনি আরো বলেন, আমি সারাবছর সিজনাল বিভিন্ন ফলের ব্যাবসা করে থাকি সব ফলে সমান ভাবে ব্যবসা করা যায় না। মাঝে মধ্যে ফল ব্যবসায় লস গুনতে হয় আমাকে, লাভ ও হয় অনেক ফলে।

তরমুজ এ সিজনের অতি জনপ্রিয় ফল, চৈত্রের খর তাপে তৃষ্ণা মেটাতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। এই রোজায় এই তরমুজের শরবত বেশ জনপ্রিয়। সবুজ মোটা খোসাযুক্ত গোল বৃত্তে আবৃত লাল রসালো ফল এ তরমুজ।

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যেমন আছে এ ফলে তেমনি আছে মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিজেনের মতো নানা উপাদান। এ ছাড়া তরমুজ শরীরে পানির অপূর্ণতা পূরণেও বেশ সহায়ক। তাই এই গরমে ইফতারিতে পানিস্বল্পতা পুরনে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করতে পারে।

NewsDetails_03

দাম একটু বেশি হলেও এর চাহিদা ব্যাপক, তথ্যসংগ্রহকালীন প্রায় আড়াই হাজার তরমুজ বাহী
একটি ট্রাক সুবর্ণচর থেকে এসে ট্রাক থেকে ফল নামানো হচ্ছে।

৪ ধাপে তরমুজ ক্রয় করে এনেছেন জানিয়ে মাটিরাঙ্গার স্থানীয় ফল ব্যাবসায়ীর মিজান বলেন, সকলের কেনার চাহিদা এক নয়, বিধায় বহুধাপে তরমুজ ক্রয় করি। যার যার সাধ্যানুযায়ী সকল শ্রেণির লোকজন যেন তরমুজ ক্রয় করতে পারে সেটা মাথায় রেখেই এরকম ভাবে ক্রয় করে এনেছি। প্রতিটা তরমুজ ৩০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। আমার এখানে ১ কেজি থেকে ১৫ কেজি ওজনের তরমুজ রয়েছে। বেশি দামে কিনতে হয়, পরিবহন ভাড়া, শ্রমিক খরছ তাছাড়া তরমুজ বিক্রি করতে লোক নিয়োগ করতে হয় বর্তমানে জিনিসপত্রের দামের সাথে পরিবহন, শ্রমিকের দাম বেশি পড়ে যায় বিধায় একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

তরমুজ ক্রেতা এম মাইনউদ্দিন জানান, একটি তরমুজ কিনলাম দাম নিল ৩শত টাকা, তরমুজের মান বা আকার অনুযায়ী দামটা একটু বেশিই হয়েছে তাই প্রশাসনের নজরদারী আশা করেন তিনি।

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস। ফলটির উপকারিতা ও গুণাগুণ অনেক। দেহের পুষ্টিসাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য এটি একটি অতুলনীয় এবং কার্যকর ফল। আনারস খাওয়া শরীরে জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই রোজায় আনারসের জুস পছন্দ অনেকের।

গরমে আনারসের কদর বেশি পার্বত্য এলাকাসমূহে, সেই সাথে মাটিরাঙ্গা বাজারে আরো আগ থেকেই আনারস বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটিরাঙ্গা বাইল্যাছড়ি রাস্তার মাথা এলাকা থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে আনারস বিক্রি করেন প্রিয় চাকমা। নিজ বাগানের আনারস নিজেই বিক্রি করেন তিনি। এবারে তিনি প্রায় ১ লাখ আনারস বিক্রি করেন। বিভিন্ন সাইজের বিধায় প্রতি জোড়া আনারস ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। মোট কতটাকা বিক্রি করেছেন হিসাব না করলেও মোটামোটি লাভ হয়েছে বলে তিনি জানান,

মাটিরাঙ্গায় বাসিন্দা মো: হোসেন বলেন, কামাল নামে এক ব্যাবসায়ী আনারস বাগান ক্রয় করে তাকে বিক্রি করার জন্য দৈনিক ৩শত থেকে ৩শত ৫০ টাকা পারিশ্রমিক দেন। তিনি চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে একটি ছাতা মাথায় দিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার আসারস বিক্রি করেন বলে জানান।

আনারস কিনতে আসা আরেক ক্রেতা জানান, আকার অনুযায়ী ১ জোড়া আনারস ১শত টাকা হতে পারে না উনারা নিজেদের ইচ্ছামতো ই বেশি দামে বিক্রি করছেন।

এদিকে পেঁপের সিজন না থাকলেও বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম চওড়া ওজন করে যে যার ইচ্চামতো বিক্রি করছেন। প্রতিকেজি পেঁপে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে যেভাবে পারছেন বিক্রি করছেন। রমজান উপলক্ষে উপরিউক্ত অন্যান্য ফলের চাহিদা থাকলে সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু পেঁপের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কম তা দাম বেশি বলে মনে করছেন অনেকে।

এদিকে রোজায় এসব ফলের তুলনায় দেশীয় বাংলা কলা নামে খ্যাত কলাটির বেশ চাহিদা এবং দাম ও বেশি প্রতিটি ডজন কলার দাম ৭০ টাকা থেকে শুরু করে আকার অনুযায়ী দাম কম বেশি হয়ে থাকে। পার্বত্যাঞ্চলে কলার চাষ হলেও দাম একটু বেশি। উপজেলাটি একটি পর্যটন এলাকা হওয়ার দরুন কলার দাম বেশি বলে মনে করেন সচেতন মহল।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মিজ তৃলা দেব বলেন, রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং ফল অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা অপরাধ, বাজার মানিটরিং চলমান রয়েছে, অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন