পাহাড়ী ঐতিহ্যের সানাইয়ের সুর আর সৈন্য-সামন্ত পরিবেষ্টিত তলোয়ার নিয়ে রাজ ভবন থেকে রাজকীয় বেশে নেমে এলেন বোমাং সার্কেলের ১৭তম রাজা বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী। আজ সকাল থেকে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বান্দরবানের রাজকর আদায়ের উৎসব ১৩৯ তম রাজ পূণ্যাহ মেলা শুরু হয়েছে।
বান্দরবানের রাজকর আদায়ের উৎসব ১৩৯ তম রাজ পূণ্যাহ মেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর,২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুবায়ের সালেহিন, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা ও খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কং জরী চৌধুরী ও পৌর মেয়র ইসলাম বেবীসহ অনেকে।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে আজ পাহাড়ে আজ শান্তির সুবাতাস বইছে, এইসময় তিনি রাজপূণ্যাহ উপলক্ষে বান্দরবানবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
এর আগে বালাঘাটা পুলিশ লাইন্স স্কুল উদ্ভোধন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, জনগন এক সঙ্গে দাড়িয়ে আমরা এই জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমন করতে আমরা সক্ষম হয়েছে। মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে এই জঙ্গীরা দেশের ভাল চাইনা, মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে এটা কোন ধর্মীয় বিবাদ নয়। এটা স্রেফ সন্ত্রাসী, স্রেফ জঙ্গীবাদ, সেজন্যই মানুষ আজকে ঘুরে দাড়িয়েছে। আমরা মনে করি, মানুষ যেখানে এসব চায়না, ঘুরে দাড়িয়েছে, তখন আর এ জঙ্গীবাদ, এ সন্ত্রাস আমাদের দেশে মাথা তোলে দাড়াতে পারবেনা।
সকালে বোমাংরাজা উ চ প্রু চৌধুরী ঢাল ও তলোয়ার নিয়ে রাজ ভবন থেকে নেমে আসেন। পরে তিনি অতিথিদের নিয়ে শহরের রাজার মাঠে রাজপূণ্যাহ উৎসবে যোগ দেন। মেলায় জেলার ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য মন্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তিনদিন ব্যাপি এই মেলা পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়, মেলা প্রাঙ্গনে আসে শত শত বিভিন্ন ধরণের ষ্টল। মেলাকে ঘিরে দেশি- বিদেশী পর্যটকদের ভীর জমেছে বান্দরবানে।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্র জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
আরো জানা যায়, বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতিহ্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।
এদিকে,রাজপূণ্যাহ মেলাকে ঘিরে বান্দরবানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, অনুষ্ঠানস্থলে ৪শ পুলিশের পাশাপাশি লাগানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামরা।