মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অপরাধীদের বিচার এখনও চলছে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলতে থাকবেই। এই বিচার শেষ হবে না।’ বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষ অবলম্বনকারীদের বিচারের সময় চলে এসেছে। যারা তাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা তুলে দিয়েছে, তারাও সমান অপরাধে অপরাধী। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের যেমন বিচার হয়েছে, এদেরও বিচার হতে হবে। সময় এসে গেছে, দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘যতই কৌশল আর ষড়যন্ত্র করুক না কেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। কারণ, এটা ন্যায়সঙ্গত পথ। ন্যায় ও সত্যের জয় সব সময় হয়, হবে।’
আল বদর আল শামস পাকিস্তানিদের এদেশের পথ ঘাট চিনিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যদি কিছু বেঈমান জন্ম না নিতো, আর আল-বদর, আল-শামস্ বাহিনী তৈরি না হতো, তাহলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না বাংলাদেশের আনাচে-কানাচের পথ-ঘাট চেনা। আল-বদর, আল-শামস আর রাজাকারের দলই তাদের পথ দেখিয়েছিল। তালিকা করেছিল। বাঙালিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।’
বুদ্ধিবীজীদের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে চোখের ডাক্তার, তার চোখ ফেলে দেওয়া হয়েছিল। যে হার্টের ডাক্তার, তার বুক কেটে হার্ট বের করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কত অত্যাচার নির্যাতন করে এই হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল, সে বিভৎস অবস্থা চিন্তা করলে সারাশরীর শিউরে উঠবে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বদলে ফেলতে লাগলো ইতিহাস। তখন আর পাকিস্তানি হানাদার বলা হতো না। বলা হতো হানাদার। কারা হানাদার। বলার সুযোগ ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে মুখ ফুটে কিছু বলা যেত না। নতুন প্রজন্মকে এসব জানতে দেওয়া হতো না। এমন দিন ছিল, আমরা জয় বাংলা স্লোগান দিতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করতে পারতাম না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছিলাম।
দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী দিনের পর দিন সংগ্রাম করে গেছেন। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। আমি আপনাদের সামনে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। একটার পর একটা হামলা হয়েছে। আমাকে রক্ষা করেছেন, আমার এই দলের নেতাকর্মীরাই। কখনও তো কেউ ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাননি।
দলের ত্যাগী নেতাদের অবদানের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সবাই বিকিয়ে যায়নি, সবাই বিকিয়ে যায় না, সবাই বিকিয়ে যেতে পারে না; তাহলে, বাংলাদেশ এই জায়গায় আসতে পারতো না।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘মাঝখানে একটা কালো মেঘ এসেছিল। কিন্তু, সেই মেঘটা সরে গেছে। আশা করি, এই মেঘের ঘনঘটা আর কখনও আসবে না। আর, এলেও তা মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের মানুষ পারবে।’
বাবা বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে আমি দোতলার সিঁড়ির কাছে গিয়ে বসি। একটা প্রশ্নের উত্তর আমি কখনোই খুঁজে পাই না। যে বাঙালির জন্য আমার বাবা সারাটা জীবন কষ্ট করলেন, তার বুকে কিভাবে গুলি চালানো হলো? তাকে গুলি করে ওই সিঁড়ির ওপর ফেলে রেখে দিলো? তিনি তো কোনও দিন এটা বিশ্বাসই করতে চাননি, ভাবতেও পারেননি যে, এই বাঙালির কেউ তার বুকে গুলি চালাতে পারে।’
অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কথা বলতে গিয়ে কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর যারা মারা গিয়েছেন, তাদের অনেক আগেই মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে চলে আসতে বলা হয়েছিল। তারা ভেবেছিলেন, দেশে থেকেই যুদ্ধ করবেন। অনেকে ভেবেছিলেন, দেশ স্বাধীনই হবে না। এখন যারা ইউনুস আর ড. কামালের পাল্লায় পড়ে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করছেন, শেখ হাসিনা না থাকলে, তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।’ আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী ও সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নুর বক্তব্য রাখেন।
খবর-বাংলাট্রিবিউন এর।