রাঙামাটির যে বিদ্যালয়ে মৃত্যু ঝুঁকিতে চলে পাঠদান !

NewsDetails_01

ভয়, শংকা আর মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হয় ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের। স্কুলে পাঠিয়ে অজানা আশংকায় থাকেন মা-বাবারা। প্রায়শঃ ছাদ থেকে পলেস্তার খসে পড়ে। অনেক জায়গায় রয়েছে বড় বড় ফাটল। প্রায় অর্ধশতাব্দি পেরিয়ে আসা স্কুলের জীর্নশীর্ন পাকাভবন ও নড়বড়ে টিনবেড়ার ঘরে এভাবেই কাটে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিটামুহুর্ত।

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার তবলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন দৃশ্য গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। নানা সমস্যায় জর্জরিত স্কুলটির সহসাই সংস্কার কাজে হাত না দিলে, যেকোন মুহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানী হতে পারে।

লংগদুর তবলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লংগদু উপজেলার ৭ নং ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের রাঙাপানি ছড়া গ্রামে তবলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রায় একশ ছাত্রছাত্রী রয়েছে এই বিদ্যালয়ে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিদ্যালয়টি ঝুকিঁপূর্ণ হওয়ার ফলে বিগত ২০১৯ সালের ৬ মে বিদ্যালয়টি লংগদু উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী কর্তৃক পরিদর্শনের পর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করেন। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে কোন উদ্যেগ নেয়া হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের চারপাশের ওয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। ওয়াল ,বীম, কলাম, ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়েছে এবং রড দেখা যাচ্ছে। এতে করে পুরো ভবনটিই জরাজীর্ণ এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটি ঝুকিঁপূর্ণ হওয়া সত্বেও নিরুপায় হয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

এদিকে, পরিত্যক্ষ ভবনটির পাশে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে কোন রকমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। অপরদিকে, এত বছরের পুরনো বিদ্যালয়টিতে নেই কোনো টিউবওয়েল, টয়লেট যেটি রয়েছে সেটির অবস্থা খুবই নাজুক।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মনিকা চাকমা জানান, বৃষ্টি হলে ক্লাসরুমে পানি পড়ে, রোদ উঠলে প্রচন্ড গরম লাগে এর কারনে আমরা এই ভাঙ্গা টিনের ঘরে ক্লাস করতে পারি না। আমাদের খুবই কষ্ট হয়।

চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী বর্ষা চাকমা জানান, আমাদের এই স্কুলে একটি টিউবওয়েল নাই, আমাদের পানি খেতে খুবই সমস্যা হয়।

NewsDetails_03

রাঙাপানি ছড়া গ্রামের রিটন চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ষ ঘোষনার আগে ভবনের বীম থেকে পাথর খসে পড়ে আমার ছেলের মাথা ফেটে যায় এবং হাসপাতালে পর্যন্ত নিতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার দাবী থাকবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে বিদ্যালয়টি পুণ:নির্মাণ করা হোক।

রাঙাপানি ছড়া এলাকার হেমা চাকমা বলেন, আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় লাগে। কখন আবার বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে।

তবলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্মৃতি বিকাশ চাকমা বলেন, বিদ্যালয়টি অত্যন্ত ঝুঁিকপূর্ণ অবস্থায় আছে। কোনমতে বিদ্যালয়টির পাশে টিনের ঘরে রুমটিতে ক্লাস করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ভীতির কারণ হয়েছে। তাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানাচ্ছি।

এদিকে, লংগদু ৭ নং ইউপির ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার দীর্ঘায়ু চাকমা বলেন, এখানে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে টিনশেড ঘরটি করা দেয়া হয়েছে, এতে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করতে পারেনা অতিমাত্রায় গরমের কারনে।

দীর্ঘায়ু চাকমা আরো বলেন, বিদালয়টির ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য সুপেয় পানির জন্য কোন টিউবওয়েলও নাই। পাহাড়ী ঝর্ণা এবং কুয়ো থেকে পানি সংগ্রহ করে তাদের পিপাসা মেটাতে হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) এর আওতায় আমাদের সকল বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মিত হবে। মো: সাজ্জাদ হোসেন আরো বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি চলমান রয়েছে আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুলটি নির্মিত হবে।

এদিকে, পার্বত্য জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিভাগ হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, লংগদুর তবলছড়ি সরকারী প্রা: বিদ্যায়টি ক্লাস করার অনুপযোগী, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছেনা, ওয়াশব্লক নাই, সুপেয় পানির ব্যবস্থা নাই এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি।

অংসুই প্রু চৌধুরী আরো বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে বিদ্যালয়টির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

আরও পড়ুন