বান্দরবানে বেড়েছে শিমের আবাদ

NewsDetails_01

শীত মৌসুমের অন্যতম সবজি শিম। কম মূলধন ও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বান্দরবানের পাহাড়ে শিমের আবাদ বাড়ছে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শিম চাষের ভালো ফলন হয়েছে। শীতকালীন সবজি হিসেবে জনপ্রিয় হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে। আর ভালো ফলন ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় খুশি চাষিরাও।

বান্দরবানের সবজিভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত লামা, সুয়ালক, মাঝেরপাড়া, গোয়ালিখোলা, কদুখোলা, রেইছা, ডলুপাড়া বালাঘাটা। এসব এলাকায় বিভিন্ন স্থানে দুচোখ যেখানেই যায় সেখানেই দেখা মিলছে শিম খেত। সেখানে বেশি চাষ হয় সীতাকুণ্ড, ইপসা, নলডুবি কার্তিকীসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের শিম। এসব এলাকার চাষিরা তামাক চাষ কমিয়ে এখন বিভিন্ন সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে ট্রাক ও পিকআপে করে পাইকাররা শিমসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে পাহাড়ে শিমসহ শীতকালীন সব সবজির ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাঠজুড়ে ছেয়ে গেছে শিমের খেতে। গাছে ছড়ায় ছড়ায় ঝুলে আছে শিম। আবার কোথাও কোথাও ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিমগাছ। এমন চিত্র দেখা মিলছে সুয়ালক, রেইছাসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিটি খেত থেকে নারী-পুরুষ দলবেঁধে শিম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ গাছ থেকে শিম তুলছেন আবার কেউ বিক্রি করতে বস্তায় ভরে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।

NewsDetails_03

চাষিরা জানান, বাজারে চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি শিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এবার গতবারের চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে তাদের উৎপাদিত শিম।

রেইচা চাষি হ্লামং প্রু মারমা বলেন, ‘এবার দুই একর জমিতে শিমচাষ করেছি। সার ও কীটনাশকসহ সবকিছু মিলে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছি। আশা করছি শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারব।

অপর এক শিমচাষি শৈনাচিং মারমা বলেন, ‘এবার শিমের ভালো ফলন হয়েছে। শিম সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছি। শিম চাষ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। খুব বেশি যত্নও নিতে হয় না। কিন্তু শীতকালীন অন্য সবজির তুলনায় ফলন ভালো হয়। শিমের পাশাপাশি বীজেরও প্রায় দ্বিগুণ দাম পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভালো মতন পরিচর্যা করলে একগাছ থেকে ৮ থেকে ৯ বার শিম বিক্রি করা যায়। এতে আমার মতো কৃষকরা লাভবান হতে পারছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যনুযায়ী, গত বছর জেলায় ৬৬২ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এতে শিম উৎপাদিত হয় প্রায় ৮ টন। চলছি মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। শিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪০০ টন। তবে জেলায় বন্যার কারণে কৃষি আবাদের পরিমাণ কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে।

বান্দরবানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক হাসান আলী বলেন, ‘এবার জেলার শিমের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে দাম রয়েছে সেসব দামে বিক্রি করছেন চাষিরা। ন্যায্য মূল্য পেয়ে খুশি কৃষকরা। তা ছাড়া শিমের যেন ফলন আরও বাড়ে সেজন্য মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন