রাজস্থলীতে চড়ক পুজা
পার্বত্য চট্টগ্রামে ২য় তম চড়ক পূজা রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধক পুরুষ শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বেরানন্দ গিরি পুরি মহারাজ এর ১১৩তম আবির্ভাব উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) শ্রী শ্রী চড়ক পুজা আয়োজন করেন স্থানীয় সনাতনি সম্প্রদায়ের লোকজন।
জানা যায়, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পুজার প্রচলন করেন। রাজ পরিবারের লোকজন এই পুজা আরম্ভ করলেও চড়কপুজো কখনও রাজ-রাজড়াদের পুজা ছিল না। এই পূজার অপর নাম নীল পূজা। গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়ক পুজোরই রকমফের। আগের দিন ৮০ ফুট রম্বা চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়।
পতিত ব্রাহ্মণ এই পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চৈত্র মাসের শেষ দিন বা চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়ক পুজো। এটি মূলত সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। নববর্ষের দিন একদিনব্যাপী এই চড়ক পূজার উৎসব চলে। লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবের আরাধনা এবং উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এই উৎসব প্রচলিত ছিল।রাজ পরিবারের লোকজন এই পুজো আরম্ভ করলেও পূজারিদের কাছে ‘বুড়োশি পুজোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুরির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারানো বা হাজারা পুজো করা।
এই সব পুজোর মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। পুজোর উৎসবে নানা রকমের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনও কখনও জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে বন্ধ করলেও গ্রামবাংলার যে সব অঞ্চল মূলত কৃষিপ্রধান সেখানেই চড়কপূজা উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
পূজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমল দেব, পংকজ ভুষন চৌধুরী, বিশ্বনাথ চৌধুরী,হারাধন কর্মকার, প্রবীর দত্ত, সন্তোষ শীল, নিপতি দে, রিটন দত্ত,পুলক সাহা, নয়ন চৌধুরী,বাহাদুর কর্মকার, ইউপি সদস্য শিমুল দাস, বাপ্পী দেব প্রমুখ। এদিন দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।