গরু চরিয়ে সংসার চালান বান্দরবানের মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া
স্বাধীনতার ৪৫ বছর, কত সরকার আসলো আর কত গেল কিন্তু কোন সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাইনি, বলছিলেন স্বাধীনতার পর শিক্ষার জন্য নিজের জমি দানকারী বান্দরবানের মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া। নিজের সহজসরলতার কারনে সংগ্রহ করতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা সনদও, এখন জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য তিনি এখন অণ্যের গরু চরিয়ে সংসার চালান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর ৮নং ওয়ার্ড আলী মিয়া পাড়ার বাসিন্দা মরহুম আলী মিয়ার পুত্র আলতাজ মিয়া। বয়স প্রায় ৭১ এর কাছাকাছি। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধার সংসার। ধারদেনা করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও বর্তমানে সংসারে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। সামান্য থাকার আবাসস্থল ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নেই। জীবন বাঁচাতে তিনি এখন রাখাল, স্থানীয় আদিবাসীদের চুক্তিভিত্তিক গরু চরিয়ে পাওয়া অর্থ দিয়ে কোন রকমে সংসার চালান। যুদ্ধের পরে পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমিটিও বাড়ীর পার্শ্বের আলী মিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দান করে দেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
এই ব্যাপারে আলী মিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবিন চাক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি দান করেছে এটা সত্যি, তিনি অনেক কষ্টে আছেন, কোন ভাবে সংসারটা চালান।
আরো জানা গেছে, বর্তমানে তিনি বয়সের ভারে কাবু হয়ে গেছেন, সংসারে উপার্জনের কেউ নেই। তাই মানুষের গরু চরিয়ে জীবনের ঘানি টানতেই যেন বেঁচে আছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও কেউ তার খোঁজ খবরতো দুরের কথা, সরকারের পক্ষ থেকে এই পর্যন্ত কোন ধরনের সুযোগ-সূবিধা পাননি। ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ির অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাকেও একবার তলব করেছিলেন তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপর থেকে আর কোন ধরনের খোঁজ খবর পাননি তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাজ মিয়া আরো বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার জন্য কমান্ডার মেজর আব্দু সোবহানের নেতৃত্বে যুদ্ধে সরাসরি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। যুদ্ধ চলাকালীন বান্দরবানের লামার ফাসিয়াখালী, তীরের ডিব্বা, আলীক্ষ্যং, নতুন ম্রো পাড়া হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে তাদের অনেকেই হতাহতসহ স্থানীয় ম্রো পাড়ার বাসিন্দা লাবরে ম্রো প্রাণ হারান। এ ছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন তিনি কক্সবাজারের রামু উপজেলার উখিয়া, মরিচ্যাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আলতাজ মিয়ার সাথে যুদ্ধ করেছেন ঈদগড়ের মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী, গর্জনীয়া বড়বিলের মোঃ হাশেম, প্রয়াত কমান্ডার এমদাদ মিয়া, ডাঃ সিরাজ, নুরুল ইসলামসহ সকলেই বর্তমানে সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, কেবল না পাওয়ার দলে এই মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা আলতাজের ভাতিজা ইদ্রিস আলী বলেন, উখিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমদাদ মিয়ার হাতে উনার সব কাগজপত্র ছিলো, কমান্ডার মারা যাওয়ার কারনে কাগজ পত্রের কোন হদিন নেই।

NewsDetails_03

স্থাণীয় ৮নং ওয়ার্ডের নারিচবুনিয়া, আলী মিয়া পাড়া, পূর্নবাসন পাড়াসহ একাধিক গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আলতাজ মিয়াকে সকলেই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চিনে। সে অল্প শিক্ষিত হওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দপ্তরগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে না পারার কারনে এই অবস্থা।
নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারির ৮নং ওয়ার্ডের নারিচবুনিয়ার ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, এলাকার প্রবীন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও বলে উনি মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারনে উনি কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি।
এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এই বীর সৈনিকের সুযোগ-সুবিধাসহ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকা অন্তর্ভূক্তিকরনের দাবী জানান স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন