টাকা নিয়ে নির্বাচনে জিতিয়ে দেন রুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জন !
সদ্য অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে বান্দরবানের রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রুমা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। এনিয়ে বাজার কমিটি ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের সূত্র জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তৃতীয় ধাপে গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বান্দরবানের রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন মংসিংথোয়াই মারমা। নির্বাচন প্রচারণা চলাকালীন সময় প্রার্থী মংসিংথোয়াই মারমাকে রুমা বাজারে দোকানে ডেকে পাঠান অঞ্জন বড়ুয়া।
মংসিংথোয়াই মারমার ভাষ্য মতে, রুমা বাজার কমিটি সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া তাঁকে বলেন, নির্বাচনে জিততে হলে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিংসহ পুলিশকে ম্যানেজ করতে হবে। এ ম্যানেজের ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব হবেনা। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ রয়েছে তাঁর।
মেম্বার পদে জিতিয়ে দিতে ম্যানেজ করার জন্য টাকা দরকার বলে অঞ্জন বড়ুয়া তাকে (মংসিংথোয়াই মারমা) জানায়। এতে সরল বিশ্বাসে মৌন সম্মতি দেখালে পরে প্রায় সময় মুঠোফোনে কল দিতে থাকে অঞ্জন বড়ুয়া। ততক্ষণে নির্বাচন প্রচারণায় শেষ হতে এক সপ্তাহের কম সময় ছিল। রুমা বাজারে আসলে আবারও অঞ্জন বড়ুয়া তাঁর দোকানে ডেকে পাঠান মংসিংথোয়াই মারমাকে। মেম্বার পদে জিতিয়ে দেয়ার লোভ দেখানোয় ওইদিন প্রথমবার ২৭ হাজার টাকা তুলে দেয় অঞ্জন বড়ুয়ার কাছে। পরের দিন আবার কল দিয়ে মংসিংথোয়াইকে বলা হয়-জেলা থেকেও অনেক অফিসার আসছে, তাদের ম্যানেজ করতে হবে। না দিলে আগের দেয়া টাকা কোন কাজে আসবেনা। ওই টাকা এমনে অন্যখানে দিয়ে দিয়েছি। একথা শুনে পরদিন বাজারে এসে সংগ্রহ করে দ্বিতীয়বার আরও পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন অঞ্জন বড়ুয়ার হাতে। তখন নির্বাচনের প্রচারণা আর মাত্র কয়েকদিন বাকী।
রুমা বাজারে আসলে আবারও টাকা দিতে হবে একথা বললে আমিও (মংসিংথোয়াই) বিব্রতবোধ করেন। ততক্ষণে হাতে খরচের টাকাও অনেকটা শূণ্য কোটায়। তারপরও নিজের প্রার্থীতার কথা চিন্তা করে কারোর কাছে ধার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আবারও ৫ হাজার টাকা তুলে দেন অঞ্জন বড়ুয়ার কাছে। এতে মোট ৩৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন অঞ্জন বড়ুয়া।
২৮ নভেম্বর রুমায় চারটি ইউনিয়নের সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মংসিংথোয়াই নির্বাচনে হেরে যায়।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, বাজার কমিটি সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া সত্যিকারে মেম্বার পদে জিতিয়ে দিতে কোন কাজ করেননি। প্রতারণা ও লোভ দেখিয়ে টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়েছে।

এই বিষয়টি একদিকে সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়, অন্যদিকে মংসিংথোয়াই মারমাও টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এঅবস্থায় ১০হাজার টাকা করে দুই কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাজার পরিচালনা কমিটি সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া।
এঘটনায় রুমা বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে অঞ্জন বড়ুয়ার সভাপতির দায়িত্ব পালনে তাঁর নৈতিক স্খলনের বিষয়টি প্রশ্ন ওঠেছে।
রুমা বাজার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক মীর নাছির উল্লাহ বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। তবে এ অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অঞ্জন বড়ুয়ার ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং কমিটি কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে সবার স্বার্থে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানালেন তিনি।
কমিটির কোষাধ্যক্ষ দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া টাকার নেয়ার বিষয়টি তাঁর দোকানে ভুক্তভোগী মংসিংথোয়াই মারমার সাথে এক আলাপচারিতায় তার মুখে জেনেছেন। তবে অঞ্জন বড়ুয়া ভোক্তভোগীকে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে সমস্যা সমাধান হয়েছে বলেও শুনেছি।
এই বিষয়ে রুমা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রুমা বাজার পরিচালনা কমিটি সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, টাকা নিয়ে মেম্বার পদে জিতিয়ে নেয়ার অভিযোগটি সত্য নয়। তাঁর সাথে টুকটাক সমস্যাও ইতোমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে উল্লেখ করে অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ব্যবসায়ির কাজে মংসিংথোয়াই এর কাছে টাকা পাওনা আছে বলে দাবি করেন তিনি।
টাকা পাওনা থাকলে ১০হাজার করে দুই কিস্তিতে উল্টো ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হলেন কেন? এটা কিসের টাকা ফেরত দিলেন, এসব প্রশ্নে এড়িয়ে যান অঞ্জন বড়ুয়া।
তবে মংসিথোয়াই বলেন, অঞ্জন বড়ুয়ার সাথে কোন কালে কোন ব্যবসা সম্পর্ক নেই, সব মিথ্যা ও বানানো। গ্রহনকৃত ৩৭ হাজার টাকার মধ্যে আমাকে ২০ হাজার ফেরত দিয়েছে।