লামায় শ্রমিকলীগ নেতা সুজন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

হত্যায় জড়িত স্ত্রী ও গাড়ির হেলফার

NewsDetails_01

অবশেষে বান্দরবানের লামা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন হোসেন (২৮) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের আটক করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে লামা থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার ৯ দিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে (১ আগস্ট) পুলিশ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে সক্ষম হয়। নিহত সুজন হোসেন লামা পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত চুকু মিয়ার ছেলে। আটকরা হলেন, নিহত সুজন হোসেনের স্ত্রী নুর বানু (২৮) ও জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ ছালামী পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে হানিফ (৩০)।

পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সুজন হোসেন ও নুর বানু পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। তাদের ১১ বছর বয়সী এক ছেলে ও ৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সুজনের বাড়ি লামা পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়ায়। তিনি স্ত্রী সন্তান সহ সাবেক বিলছড়িস্থ শশুরবাড়ীতে ঘর জামাই হিসেবে থাকতেন। আগে সুজন হোসেন হোটেল কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ধারাবাহিকতায় উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও নির্বাচিত হন সুজন হোসেন। পূর্বের পেশা ছেড়ে দেওয়ার কারণে সুজন হোসেনের সুনির্দিষ্ট কোন পেশা বা আয় ছিল না। স্ত্রী আর শাশুড়ির আয়ে সংসার চলতো। প্রায় সময় সুজন হোসেন স্ত্রীকে টাকার জন্য মারধর করতো। স্ত্রী কাজ করে এবং অনেক সময় ঋণ নিয়ে স্বামীর আবদারের যোগান দিত। টাকা দিতে না পারলে সুজন হোসেন মারধরসহ ঘর ভাংচুর করত। শুধু তাই নয়, সুজন হোসেন বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলে সম্পর্ক গড়ত। এ নিয়ে সুজন হোসেন ও স্ত্রী নুর বানুর মধ্যে প্রায় সময় মনমালিন্য হতো। ঘটনার কয়েকদিন আগে টাকার জন্য সুজন হোসেন স্ত্রী নুর বানুকে মারধর করে ও হত্যার চেষ্টা করে। বার বার এ ধরণের ঘটনার কারণে স্ত্রী নুর বানু স্বামী সুজন হোসেনের উপর ক্ষুব্ধ হন।

গত তিন মাস আগে নিহত সুজন হোসেনের স্ত্রী নুর বানু ব্যক্তিগত কাজে পুরবী পরিবহনে করে বান্দরবান সদরে যাওয়ার সময় গাড়ির হেলফার হানিফের সাথে পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর বিনিময় হয়। এরপর থেকে উভয়ের মধ্যে কথাবার্তা হতো। স্বামীর সাথে মনমালিন্য এবং স্বামীর নির্যাতনের ঘটনা হানিফের সাথে শেয়ার করে নুর বানু। এরপর সুজন হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০ জুলাই হানিফ চকরিয়া থেকে লামায় অবস্থান করে। কিন্তু ওই দিনগত রাতে খাবারের সাথে সুজন হোসেন কে ঘুমের ঔষধ খাওয়াতে না পারায় বাতিলও করে পরিকল্পনা।

NewsDetails_03

২১ জুলাই ডাক্তার দেখানোর জন্য নুর বানু তার মা ও কন্যাকে নিয়ে লামা বাজারে যায়। পরদিন আবারও ডাক্তার দেখাতে হবে বলে কৌশলে দুই সন্তানকে সুজন হোসেনের নয়াপাড়াস্থ ভাইয়ের বাসায় রেখে যান। পরে এ দিনগত রাতে পূর্ব পরিকল্পনা মতে নুর বানু ভাতের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিলে স্বামী সুজন হোসেন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি ফোনে নুর বানু জানালে রাত ১১টার দিকে হানিফ ঘরে প্রবেশ করে। এরপর নুর বানু গামছা দিয়ে ঘুমন্ত সুজন হোসেনের পা বেঁধে ফেলে। এ সময় হানিফ সুজনের গায়ের উপর উঠে কম্বল দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরেন। এর মধ্যে সুজন হোসেনে ঘুম থেকে উঠে ধস্তাধস্তি শুরু করলে পায়ের বাঁধন খুলে যায়। এ অবস্থায় সুজন হোসেনের নাকে মুখে ঘুষি মেরে গামছা দিয়ে গলা পেঁছিয়ে ধরে হানিফ এবং নুর বানু সুজনের অন্ডোকোষ চেপে ধরে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সুজন হোসেন নিস্তেজ হয়ে গেলে রাত ২টার দিকে নিহতের লাশটি ঘাতক হানিফ ও নুর বানু পাশের ঝিরিতে ফেলে আসে।

পরে পানির স্রোতে ভেসে লাশটি মাতামুহুরী নদীতে চলে যায়। পুলিশ ২৩ জুলাই বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাতামুহুরী নদীর মেরাখোলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে সুজন হোসেনের লাশ উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় লামা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত সুজন হোসেনের ভাই মো. শরিফুল ইসলাম।

সুজন হোসেন হত্যার ঘটনায় দুই জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম শেখ বলেন, আটকরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন