খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ বনাম আলম পরিবার !

NewsDetails_01

হোক জাতীয় কিংবা স্থানীয়। খাগড়াছড়িতে নির্বাচন আসলেই জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্বে উত্তাপ ছড়ায় জেলার রাজনীতিতে। আর সেসব দ্বন্দ্বে বলি হয় সাধারণ নেতাকর্মীরা৷ এবারও তার কমতি নেই। ফের প্রকাশ্যে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিনের এ দ্বন্দ্বটা মূলতঃ আলম পরিবার বনাম জেলা আওয়ামী লীগের। শুরুটা ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে। ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে। কিন্তু সেই নির্বাচনে দলের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম। পরে অবশ্য তাকে বহিষ্কার করা হয়৷ তবে ২০১০ সালের দিকে ‘বাঙালি নেতৃত্ব’-এর অজুহাতে আবার তাঁকে দলে ফিরিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়।

২০১১ ও ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনে তাঁরই ছোট ভাই রফিকুল আলম আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করে জয়ী হন। পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে আবারও জাহেদুল আলমকে বহিষ্কারের প্রস্তাব যায় কেন্দ্রে। দীর্ঘ প্রায় এক বছরের মতো তাঁর বহিষ্কারাদেশ নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল দল। এতে করে আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। মূল অংশের পাশাপাশি জাহেদুল আলমের নেতৃত্বেও আলাদা ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছিল প্রায় তিন বছর ধরে। জেলা কার্যালয়ও ছিলো দুটি৷

ফলে কোন্দল ঢালপালা মেলতে শুরু করে। কোন্দল তৃণমূলে পর্যন্তও বিস্তৃত হতে শুরু করে। একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে এ নিয়ে। জনগন বলতে শুরু করে, এ আসনে আওয়ামী লীগের শত্রু“ আওয়ামী লীগই।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি সবসময় আলম পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বটা নিরাশন করার চেষ্টা করে আসছিলেন৷ তবে এ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতোই সুবিধা নিতে চাচ্ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের অপরাপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েকজন নেতা।

সর্বশেষ ২০২১ সালের খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী। এ নির্বাচনেও বরাবরের মতোই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় রফিকুল আলম। তবে রফিকুল আলমের ছোটভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করেন। লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হলেও বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নির্বাচনে হেরে গিয়ে পুনরায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বিপক্ষে শুরু করেন নতুন ষড়যন্ত্র।

NewsDetails_03

স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ তুলে দিতে থাকেন বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য। একইভাবে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিপক্ষে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রন বিক্রম ত্রিপুরা, সহ সভাপতি সমির দত্ত, সহ সভাপতি তপন কান্তি দে, মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র শামসুল হক সহ দলের কয়েকজন নেতা।

আবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির পক্ষে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা৷ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে লেখালেখি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম জানান,স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পছন্দ না হওয়ায় বারবার তিনি নাগরিক ব্যানারে নির্বাচন করেছেন। তবে জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন। এসময় তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন৷

‘আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে কিভাবে বারবার নৌকার বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি দুঃসময়ে, দুর্দিনে, রক্ত দেওয়ার সময় ও দলের জন্য অর্থ খরচে ছিলাম। নীতি নৈতিকতাহীন প্রার্থীদের বিপক্ষে নির্বাচন করেছি।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামসুল হক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি একটি পরিচিতি সভা ছাড়া কোন প্রোগ্রাম করতে পারেননি। তিনি একক ক্ষমতা চালাতে চান। আমরা খাগড়াছড়িতে পরিবর্তন চাই৷

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু জানান, নির্বাচন আসলেই এরা দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তারা নৌকার বিরোধিতা করে আসছে।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি জানান, সমির দত্ত চাকমা কখনো আওয়ামী লীগে ভোট দেয়নি। রণ বিক্রম ত্রিপুরা ১৯৯১ সালে নিজেই নির্বাচন করেছে ও ১৯৯৬ সালে নিজেই বিরোধিতা করেছে। আর আলম পরিবার সবসময় নৌকার বিরোধিতা করেছে। নির্বাচন আসলেই তারা নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।

আরও পড়ুন