খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে মিলছে সুপেয় পানি
জন্মের পর থেকেই যাদের জীবন ছিল দুর্গম পাহাড়িয়া পথ পাড়ি দিয়ে ঝিরি ঝরনা থেকে পানি এনে জীবনযাপন করা। তারা এখন সুপেয় পানি পাচ্ছে হাতের নাগালে। এতে যেমন সময় অপচয় কমে গেছে, তেমন কষ্ট লাঘব হয়েছে এই দুর্গম পাহাড়ি জনপদে।
ভুপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫শ’ ফুট উঁচু গ্রাম খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম নয় মাইল। এ এলাকায় প্রথমবারের মতো সুপেয় পানির সংকট নিরসন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এত উঁচু গ্রামে পানি সরবরাহ এটিই প্রথম। এতে সুপেয় পানি সংকটের অবসান হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট নিরসনের এমন প্রকল্প বাড়ানোর তাগিদ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই নয়মাইল গ্রাম। এ গ্রামের দুই পাড়ায় অন্তত দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। শুষ্ক মৌসুম আসলেই এ এলাকাশ সুপেয় পানির তীব্র সংকট শুরু হয়। পাহাড়ের ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করত গ্রামবাসী। এ সংকট নিরসনে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও পাথুরে পাহাড় হওয়ার কারণে পানি স্তর পাওয়া যায়নি। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় রুরাল পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমের মাধ্যমে অবশেষে পানি পাচ্ছে গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা কবিতা ত্রিপুরা বলেন, আগে ঝিরি ঝরনা থেকে থেকে পানি সংগ্রহ করতে অর্ধদিন চলে যেতো। পানির অভাবে জীবন ছিলো অতিষ্ঠ। আমাদের এ দুর্দশা লাগবে এগিয়ে এসেছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ। আমার এখন পাহাড়েই সুপেয় পানি পাচ্ছি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা অনিল ত্রিপুরা জানান,আগে পানির জন্য ১-২ কিলোমিটার দূর থেকে পানির সংগ্রহ করতে হতো। অবশেষে আমাদের কষ্টের দিন শেষ হলো। তবে এমন প্রকল্পগুলো আরও বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
নয়মাইল রুলার পাইপ ওয়াটার সিস্টেম পরিচালনা কমিটির সভাপতি গনেশ ত্রিপুরা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখানে মানুষের পানির কষ্ট ছিল। শুষ্ক মৌসুমে এখানে পানি পাওয়া যেত না। বিশেষ করে সুপেয় পানির তীব্র সংকট ছিল। সরকারি অর্থায়নে দুই পাড়ার দুই শতাধিক পরিবার বর্তমানে সুপেয় পানি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ভুবন মোহন ত্রিপুরা বলেন, সুপেয় পানির সংকট যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা এ গ্রামের বাইরের কেউ বুঝবেনা। তবে সরকার আমাদের দুঃখ উপলব্ধি করে পানির সংকট সমাধান করেছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসান বলেন, এ এলাকার জনসাধারণের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে বিশ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধার থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে পানির সংকট নিরসনের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাশেম বলেন, পাহাড়ের শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় জনগণের জন্য কাজ করে। দুর্গম পাহাড়ে পানির সংকট সমাধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, পানির সংকট নিরসনে প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পাহাড়ে সব মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় পানি সংকট মোকাবিলায় এমন প্রকল্প আরও নেওয়া হবে।