দীর্ঘ আট মাসের পর নিজ বাড়িতে ফিরেছে ১১টি পরিবার

কেএনএফ সংঘাত

NewsDetails_01

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া ১১ টি পরিবার দীর্ঘ আট মাস পর বান্দরবানের রুমা উপজেলার প্রাতা পাড়ায় নিজ বসতঘরে ফিরলেন।

আজ শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে বম সম্প্রদায়ের ১১টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৪৮জন নিজেদের আবাসস্থলে ফিরেছেন। রুমা উপজেলা সীমান্তঘেষা ও থানচি সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে দুর্গম ১৭ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত দুর্গম প্রাতা পাড়া।

প্রাতা পাড়াবাসিরা জানায়, চলতি বছরে মার্চ মাসে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ( কেএনএফ) কর্তৃক বাকলাই পাড়া সেনা ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। পরে সেনাবাহিনীও কেএনএফ’র আস্তানায় পাল্টা অভিযান চালালে গোলাগুলিতে সেখানকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ওই সময় নিরাপদে আশ্রয় নিতে নিজ বাড়ি প্রাতা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল।

গত ৫ নভেম্বর রুমার মুনলাই পাড়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফ’র মধ্যে প্রথম স্বশরীরি বৈঠকে এ সমঝোতা স্বারক সম্পন্ন হওয়ার পর এই প্রথম ১১ পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৪৮জন ফিরলেন নিজেদের বাড়ি প্রাতা পাড়া।

NewsDetails_03

বসতবাড়িতে ফিরে আসা লালমিনসাং বম বলেন, দীর্ঘ আট- নয় মাস আগে তারা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নিজ বাড়ি প্রাতা পাড়ায় ফিরতে পেরে খুব আনন্দবোধ করছি, আমরা শান্তি ও নিরাপত্তা চায়।

সূত্র মতে, গত ২২ জুন পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষে পরিষদ চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্যশৈহ্লা শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করে। গত ১৯ জুলাই, ৪ আগষ্ট, ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক স্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ সদস্য ও ভার্চুয়ালি কেএনএফের ৪ সদস্য বৈঠকে অংশ নেয় এবং গত ৫ নভেম্বর সরাসরি প্রথম বৈঠক হয়।

প্রাতা বম পাড়ার বাসিন্দা পিয়ার নিয়ার বম বলেন, সংঘাতের কারনে নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘদিন বন -জঙ্গল ও আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয়ে ছিলাম, বাড়ীতে ফিরতে পেরে খুব খুশি আমরা।

আরো জানা গেছে, কেএনএফ এর সংঘাতময় পরিস্থিতির কারনে গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে জেলায় পর্যটক যাতায়তে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি ও পরে প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন। গত বছরের ১৫ নভেম্বরের পর ১৩২ টি পরিবারের ৫৪৮ জন ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নেয়। গত ২৮ জানুয়ারি রুমা সদরে ১৪০ মারমা নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় গ্রহন করলেও তারা গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় ফিরে যায়। ১০ মার্চ রাঙামাটির বিলাইছড়ির ৪নং বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এর ৩টি পাড়া থেকে ৫৬ পরিবারের ২২০জন তংচঙ্গ্যা রেইছা ও রোয়াংছড়ি সদরে আশ্রয় গ্রহন করে। এই ঘটনায় ৫ সেনা সদস্য নিহত ও কেএনএফ সদস্যসহ নিহত হয় আরো ১৬ জন, অপহরণের শিকার হয় অন্তত ২০ জন। এর ফলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ধস ও জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করে। কেএনএফ এর সাথে জঙ্গী সংগঠনের যোগসাজস আছে দাবী করে যৌথ বাহিনী জানায়, এই সময়ে পাহাড়ে অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জন জঙ্গী ও কেএনএফ এর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়, এসময় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

এই ব্যাপারে থানচি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চসা থোয়াই মার্মা, থানচি বাজার থেকে শনিবার সকাল ১১টায় ওরা রওনা হলে সন্ধ্যায় নিজেদের বাসায় ফিরেছে বলে আমাদের জানায়।

আরও পড়ুন