বঙ্গবন্ধু’র ৭ই মার্চের ভাষণ ম্রো ভাষায় অনুবাদ

NewsDetails_01

এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ম্রো ভাষায় অনুবাদ করেছেন বান্দরবানের লেখক ইয়াং ঙান ম্রো।

আজ শনিবার (২১অক্টোবর) বেলা ২টায় বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের রামরি পাড়ার একটি জুম ঘরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ম্রো ভাষার অনুবাদের বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ম্রো ভাষায় ৪ পৃষ্টার অনুবাদ করা বইটির নামকরণ করা হয় “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ইমার্চ তেক মি লাইক্ল”।

লেখক ইয়াং ঙান ম্রো জানান, ছোটবেলায় মা-বাবা সারাদিন জুম কাজ শেষে যখন বাড়ীতে ফিরে রাতের ভাত খাওয়ার পর ঘুম না আসা পর্যন্ত জুমঘরে মা-বাবারা, বৃটিশ, পাকিস্তান সময়কার কথাগুলো গল্প আকারে বলে শুনাতেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো বলতেন, তিনি মা-বাবার কাছে সেই সমস্ত গল্পগুলো শুনে শুনে ঘুমিয়ে পড়তেন। তার মা-বাবার আশা ছিল এই সমস্ত গল্প যেন ম্রোদের সবাইকে বংশপরম্পরায় বলা হয়। সেই চিন্তা থেকেই মুলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণটি ম্রো ভাষায় অনুবাদ করেন।

বান্দরবান জেলায় পাহাড়ীদের মধ্য দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ট ম্রো জনগোষ্ঠি। ২০২২ সালের জনশুমারী অনুযায়ী ৫০হাজারের অধিক ম্রো জনগোষ্ঠী অন্য জনগোষ্ঠির তুলনায় সবকিছুর দিক দিয়ে অনগ্রসর। তবে ৭০-৮০ শতাংশ লোক নিজেদের ম্রো ভাষায় লেখা ও পড়তে পারেন। সেজন্য দেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বইটি পড়ে ম্রো জনগোষ্ঠির লোকজন জানতে পারবেন বলে জানান লেখক ইয়াং ঙান ম্রো।

NewsDetails_03

আগামীতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লাব্রে ম্রো, পাহাড়ীদের মধ্য একমাত্র খেতাবধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউকেচিং বীর বিক্রমসহ অন্যান্য পাহাড়ী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে ম্রো ভাষায় লেখার ইচ্ছে আছে বলে জানান তিনি।

এছাড়াও ম্রো ভাষায় ম্রো সমাজের লোককাহিনীর ১০০টি রুপ কথার গল্প নিয়ে “ম্রো চ সাংচিয়া” নামে আরও একটি বইয়ের মোড়কও উন্মেচন করা হয়েছে। বইটিতে ম্রো সমাজের লোককথার ১০০টি গল্প ম্রো ভাষায় লেখা হয়েছে, আগামীতে বইটির গল্পগুলো ছবিসহ বাংলা অনুবাদ করার ইচ্ছে আছে বলে জানান তিনি।

লেখক গবেষক ইয়াংঙান ম্রো জানান, এ পর্যন্ত তিনি ম্রো বর্ণ মালায় ২১টি ও বাংলা ভাষায় ১২টি বই লিখেছেন। তিনি ৩৯ বছর বয়সে এই পর্যন্ত ৩৩টি বই লিখেছেন বলে জানান তিনি।

বই দুইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্টানে সাংবাদিক বুদ্ধজ্যােতি চাকমা, রোয়াংছড়ি কলেজের প্রভাষক অমর বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, সাংবাদিক সুফল চাকমা, কন্ঠশিল্পী প্রেন প্রে ম্রো, বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক প্রাপ্ত বাগান চাষী তোয়ো ম্রোসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম সাংলাইপাড়ায় জন্ম ইয়াংঙান ম্রো এর জন্ম। চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন, এরপর তিনি লেখক জীবন বেছে নিয়েছেন। সেই সময় ম্রোদের মধ্যে স্নাতকোত্তরধারী দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ম্রো ভাষায় প্রথম প্রকাশিত বইয়ের লেখকও তিনি।

আরও পড়ুন