বিলাইছড়ির কেংড়াছড়ি বাজারে ব্যবসায়ীদের নীরব কান্না

ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

NewsDetails_01

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ২ নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন এর জনবহুল বাজার কেংড়াছড়ি বাজার। কাপ্তাই লেকের পাশে অবস্থিত বাজারে সর্বমোট ৬০ টির মতো দোকান আছে।

সাপ্তাহিক বাজার গত শুক্রবার বেশ জমজমাট থাকে। সপ্তাহান্তে প্রায় ২০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয় এই বাজারে। আশেপাশের কাপ্তাইয়ের হরিনছড়া, ভাইজ্জাতলি, বিলাইছড়ির গাছকাটা ছড়া, কেরনছড়ি, ঢেবাছড়ি, হিজাছড়ি হতে পাহাড়ি-বাঙালি ক্রেতা বিক্রেতারা এই বাজারে আসে বিকিকিনির জন্য।
একটি অগ্নিকান্ড ব্যবসায়ীদের সব নি:শেষ করে দিল।

গত সোমবার (৮ মে) বেলা ১২ টায় কেংড়াছড়ি বাজারের একটি দোকান হতে বাজারে আগুনের ঘটনা ঘটে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে কোন দোকান হতে কিভাবে আগুন লেগেছে কেউ জানাতে পারেন নাই। কারন সেই সময় বাজারে পাশে উত্তর পাড়ায় একটি মিলাদ থাকায় অধিকাংশ দোকানদার সেই মিলাদে ছিল। ফলে আগুন নেভানো সম্ভব হয় নাই। এইছাড়া কাপ্তাই লেকে পানির স্থর এতই কমে গেছে লেক হতে প্রায় ৩ শত ফুট উপরে বাজারে পানি টেনে নেওয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না।
তবে আগুন লাগার খবর পাওয়ার সাথে সাথে অনেক কষ্ট করে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নৌ পথে ঘটনাস্থলে আসেন। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব দোকান।

এসময় স্থানীয়দের সাথে সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ প্রশাসন, আনসার ভিডিপির সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা চালায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।

আজ মঙ্গলবার (৯ মে) সকাল ৯ টায় কেংড়াছড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে সুনসান নীরবতা। এখনোও কিছু কিছু দোকানে নিভু নিভু করে আগুন জ্বলছে। ধ্বংসস্থুপের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে কান্না করছেন অনেকে।

এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ৮০ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা কিরন মিয়া জানান, তার কুলিং কর্ণার এবং ছেলের ১টি মুদি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারি নাই। প্রায় ৩০ লাখের উপর মাল ছিল তার দোকানে।

NewsDetails_03

তিনি আরোও জানান, ১৯৯১ সালে সর্বশেষ পুড়ে ছিল এই বাজার। গত সোমবারের পোড়াটা ছিল ভয়াবহ। বাতাস থাকায় বাজারের ২ পাশের সব দোকান পুড়ে গেছে। কেউ বাজারে ঢুকতে পারেন নাই।

ব্যবসায়ী মুন্না জানান, তাদের ২টি মুদির দোকান ছিল। একটা মালও বের করতে পারি নাই। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার নগদ টাকা ছিল ক্যাশে। সেটাও পুড়ে গেছে। তাদের ২ টি দোকানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখের টাকার মতো

দোকানদার এমদাদুল হক জানান, তার দোকানের নাম ছিল ইত্যাদি স্টোর। এইখানে মুদির মাল, কসমেটিকস এবং স্টেশনারী মাল ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার ক্ষতির পরিমান ২০ লাখের উপর জানান।

কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহ আলম সওদাগর, সেলিম সওদাঘর, আমির হোসেন, প্রতিবন্ধী আকবর, মমতাজ সহ অনেকের সাথে। তাঁরা কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, মুদি দোকান, ফার্নিচার দোকান, চায়ের দোকান, ইলেকট্রনিকস দোকান এবং অন্যান্য দোকানসহ সর্বমোট ৫৩ জন ব্যবসায়ীর ৫৫ টি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে যায়, কোন মালামাল বের করা সম্ভব হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক সব মিলিয়ে ৪ কোটির টাকা বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

এদিকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

আজ মঙ্গলবার (৯ মে) সকাল ১১ টায় তিনি আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ কেংড়াছড়ি বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সান্ত্বনা দেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিজন ব্যবসায়ীকে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রসালয় হতে নগদ ৫ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে সর্বমোট সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়।

বিতরণকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্রাহ আল মাহমুদ, বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান, পিআইও মো: শামসুদ্দীন, বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহীদুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মহর আলী সহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন