মাটিরাঙ্গায় জাম্বুরা উৎপাদন বেশি হলেও দাম কম

NewsDetails_01

মৌসুম শুরু হবার সাথে সাথে মাটিরাঙ্গা বাজারে জাম্বুরার সয়লাব। ঔষুধি গুনাগুণ থাকার পাশাপাশি ফরমালিনমুক্ত ও তাজা হবার দরুন এ ফলের কদর রয়েছে বেশ। তবে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব জাম্বুরা আকারে যেমন বড়, তেমনি স্বাদে আছে টক-মিষ্টির সংমিশ্রণ।

জাম্বুরা, ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর, ডায়াবেটিস, মুখের ঘা ও পাকস্থলীসহ বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী। এ ফল রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেটের নানা রকম হজমজনিত সমস্যার সমাধানে এ ফলটি বেশ উপকারী। তাছাড়া জাম্বুরা ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর।

পাহাড়ে উৎপাদিত জাম্বুরা মানসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর কদর বাড়ছে। ভিটামিন-সি সম্বৃদ্ধ জাম্বুরা মাটিরাঙ্গার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে জায়গা করে নিয়েছে। চলতি বছর জাম্বুরা চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাটিরাঙ্গায় জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়েছে।

মাটিরাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে জাম্বুরার চাষাবাদ না থাকলেও বসতবাড়ির আঙ্গিনার আশপাশে ও পতিত জায়গায় এর চাষ হয়ে থাকে। তবে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বাণিজ্যিকভাবে জাম্বুরা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে। বাণিজ্যিক চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলার মাটিরাঙ্গা, তাইন্দং, বেলছড়ি, গোমতী, আমতলী, বড়নাল এবং মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার ১০নং ইসলামপুর এবং রসুলপর এলাকায় জাম্বুরার উৎপাদন ভাল হয়। প্রতিটি বড় গাছে গড়ে ৫শ থেকে ১হাজার জাম্বুরাফল ধরে থাকে। তবে ইতিমধ্যে বানর ও কাঠবিড়ালির উৎপাতের কারণে অনেক জাম্বুরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা পুরো জাম্বুরা না খেয়ে তার খোলস বের করে নষ্ট করে ফেলে। ছিদ্রযুক্ত জাম্বুরা কেহ খাইতে বা কিনতে চায় না।

এদিকে, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ীরা মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানীয় বাজার থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করেন। এছাড়া অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে জাম্বুরা গাছ কিনে নেন।

NewsDetails_03

মাটিরাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি বস্তাভর্তি জাম্বুরা বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। জাম্বুরাকে ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি চলছে। আগে যেখানে স্থানীয় বাজারে প্রতিটি জাম্বুরা ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হতো, সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। তবে বড় সাইজের জাম্বুরা ১০-১৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ ট্রাক জাম্বুরা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। দেশে এ অঞ্চলের জাম্বুরার কদর বেশি।

জাম্বুরা বিক্রেতারা জানান, গত বছর ফলের উৎপাদন কিছুটা কম হলেও দামটা ভালো ছিল। গত বছর প্রতিটি জাম্বুরা আকারভেদে বিক্রি হয়েছিল ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। এ বছর উৎপাদন বেশি হবার দরুন দাম কম।

পাইকারি ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি অঞ্চলের জাম্বুরার কদর বেশি। গতকাল এক ট্রাক জাম্বুরা কিনেছি। প্রতিটি জাম্বুরা ৭ থেকে ৮টাকা দরে কিনতে হয়েছে। বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে এবার পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেশি বিধায় লাভের অংকটা কমে যাবে।

আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, পাহাড়ের জাম্বুরায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল না থাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এর কদর বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে জাম্বুরার দাম কম হলেও পরিবহন খরচ বেশি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর মাটিরাঙ্গায় ৫৪ হেক্টর জমিতে জাম্বুরার চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে ৬৯০ মেট্রিক টন। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে জাম্বুরা উৎপাদন হয়েছিল ৬০০ মেট্রিক টন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সবুজ আলী বলেন, চারা রোপণের পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে জাম্বুরার ফলন পাওয়া যায়, ফাল্গুন মাসে গাছে মুকুল আসে। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ফলন তোলা হয়। প্রতিটি গাছের গড় আয়ু ৩০-৫০ বছরহবার দরুন ফলন পাওয়া যায় দীর্ঘদিন। পাহাড়ি অঞ্চলের ঢালু পাহাড়ে জাম্বুরার ফলন বেশ ভালো হয়। তবে মৌসুমি ফল হলেও এটি সংরক্ষণে ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

আরও পড়ুন