মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’: পাহাড়ের প্রাণের উৎসব

NewsDetails_01

বান্দরবানের মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ এর রথ
বান্দরবানের মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ এর রথ
আতশবাজি, রং-বেরংয়ের বর্ণিল ফানুসের ঝলকানি আর ময়ুরপঙ্খীর আদলে তৈরী মাহারথ টানা উৎসবের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের বৌদ্ধ অনুসারীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’ (প্রবারণা পূর্ণিমা) উদযাপনে মেতে উঠবে।
বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় এ উৎসবের মূল আয়োজন চলবে আগামী কাল ১৫ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত। পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা’রা মাহা‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’ নামে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকে।
উৎসব কমিটির সূত্র জানায়, এবারের উৎসবে পাহাড়ের আকাশে বিভিন্ন ধরণের বর্নিল ফানুসে ঢেকে পড়বে। বৌদ্ধ মন্দিরে মন্দিরে (ক্যায়াং) প্রজ্জলন হবে হাজারো বাতি, রাতের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মারমা নাটক মঞ্চায়ন, মন্দিরে ছোয়াইং ও অর্থ দান, বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। পাহাড়ের বৌদ্ধ অনুসারী বড়ুয়া সম্প্রদায় একদিন আগে এই উৎসব পালন করেন, তাদের মতো করে।
এই ব্যাপারে বান্দরবান বাজারের ব্যবসায়ি জয় টিটু বড়ুয়া পাহাড়বার্তাকে বলেন, প্রবারণা উৎযাপনে আমরা আমাদের মতো করে পালনের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহন করেছি।
১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজার মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বন্ধনার মধ্যে দিয়ে খ্যংওয়া ও খ্যংফিয়া ক্যং এর রথ যাত্রার শুভ উদ্ভোধন, একই দিন রাজারমাঠসহ বিভিন্ন ক্যং থেকে ফানুস বাতি উত্তোলন, রাতভর পাড়ায় পাড়ায় বর্ণিল পিঠা তৈরীর উৎসব এবং মন্দিরে মন্দিরে ছোয়াইং দান (ভাত-তরকারি প্রদান)।
মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ তে ফানুস উত্তোলন (ফাইল ছবি)
মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ তে ফানুস উত্তোলন (ফাইল ছবি)
১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়েঃ লাগাইমে.. ’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যায়..) আদিবাসী মারমা’রা এই বিশেষ গানটি পরিবেশন করে মাহারথ যাত্রা শুরু করবে। এ সময় পাংখো (এক ধরণের ভূতের পুতুল) নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত আদিবাসীরা রাস্তায় নেমে আসে। রথে জ্বালানো হয় হাজার হাজার মোমবাতি এবং দান করা হয় নগদ অর্থ। রথটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মধ্যরাতে শঙ্খ (সাঙ্গু) নদীতে রথ উৎসর্গ করা হবে। ১৮ অক্টোবর খ্যংওয়া ও খ্যংফিয়া ক্যং এ বিকালে বিহারের উদ্দেশ্যে গমন, পঞ্চশীল গ্রহণ ও ধর্ম দেশনার মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের ইতি টানা হবে।
উৎসব কমিটির সূত্রে আরো জানা গেছে, বর্নিল এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পর্যায় ক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা,বোমাং রাজা উ চ প্রু, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: জোবায়ের সালেহীন, পুলিশ সুপার সঞ্জিত রায়, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ, পৌর মেয়র ইসলাম বেবীসহ অনেকে।
উক্ত দিনের প্রতিটি সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নুতন নতুন পোশাকে শহরের খ্যংওয়া ক্যাং, খ্যংফিয়া ক্যাং, করুণাপুর বৌদ্ধ বিহার, বুদ্ধ ধাতু জাদি, রাম জাদি, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, আম্রকানন বিহারসহ অন্যান্য ধর্মীয় ক্যাং বা বিহারগুলোতে প্রার্থনা এবং ছোয়াইং দানের জন্য পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকবে। মারমা তরুন তরুনীরা রাতে আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়ায় পাড়ায় একে অপরের আয়োজনে গিয়ে তৈরি করবে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি।
মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ এর রথ (ফাইল ছবি)
মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ এর রথ (ফাইল ছবি)
‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’ উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মার্মা পাহাড়বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও নির্বিঘ্নে ওয়াগ্যোয়াই পালন করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
বৌদ্ধ অনুসারীরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষ করে এবং শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে (ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ) বৌদ্ধ বিহার থেকে নিজ সংসারে ফিরে যান আর এই কারণে আদিবাসীদের কাছে এই দিনটি বেশ তৎপর্যপূর্ণ। এই উৎসবকে সামনে রেখে বান্দরবানে পর্যটক আগমনের কারনে অনুষ্ঠানস্থলের বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ পাহাড়বার্তাকে জানান, নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যা নেই,তারপরও উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঈদ, শারদীয় উৎসব এর সাথে আদিবাসীদের ভিন্ন আয়োজনের মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ এর মতো ধর্মীয় উৎসব পড়ার কারনে প্রতিবছর তিন পার্বত্য জেলায় দেশি-বিদেশী পর্যটকরা ভীর জমায়।

আরও পড়ুন