চীনের ঋণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে

NewsDetails_01

16beda010050e7b88e9468a9910109ee-58005bcdaa572শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার এই সফরে দু’দেশের মধ্যে ২৫টির বেশি চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। এসব চুক্তির আওতায় তারা বাংলাদেশকে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ দেবে। চীন যে সব প্রকল্পে ঋণ দিবে তার মধ্যে ২৯টি প্রকল্প ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে আরও অনেক প্রকল্প নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, চীনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা।
শি জিনপিংয়ের সফরে ৩টি সমঝোতা স্মারক, ৪টি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট এবং ৩টি প্রকল্প—সবমিলিয়ে ১০টি চুক্তি চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের এই ঋণ সুবিধা বাংলাদেশ সাময়িক লাভবান হলেও বাংলাদেশের ঘাড়ে বৈদেশিক ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। এ কারণে ঋণের শর্তগুলো আরও শিথিল করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তা না হলে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে এর ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘চীন এখানে বিনিয়োগ করলে তা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। তবে ঋণের ক্ষেত্রে তারা যেসব শর্ত দিচ্ছে, সেসব ঋণের শর্ত আরও শিথিল করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ঋণের বিপরীতে যদি ওদের দেশ থেকে পণ্য নিতে হয়, তাহলে ব্যয় বা বাস্তবায়ন ব্যয় অনেক বেশি হতে পারে। চীনে যেন আমাদের রফতানি বাড়ে সেই জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’ আমাদের যেসব পণ্য চীনের বাজারে রফতানি করার সুযোগ আছে সেগুলোর প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঋণ নেওয়ার বিষয়ে যখন আলাপ-আলোচনা হবে তখন কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সুদের হার যতটা কম রাখা যায় বাংলাদেশের জন্য তত ভালো। এছাড়া টাকা ফেরত দেওয়া বা রি-প্রেমেন্ট পিরিওড যতটা দীর্ঘ রাখা যায়, আমাদের জন্য ততটাই মঙ্গল। এর বাইরে ঋণে গ্রেস-পিরিওড যতটা দীর্ঘ রাখা যাবে বাংলাদেশ তত বেশি লাভবান হবে। তিনি বলেন, প্রকিউরমেন্টে যে সব রুলস রেগুলেশন থাকবে তাও যেন আমাদের জন্য সহজ হয়।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘যারা ঋণ দেয়, অনেক ক্ষেত্রে তাদের দেশের পণ্য নেওয়ার কঠিন শর্ত দেয়। এ ক্ষেত্রে চীন থেকেও পণ্য নেওয়া যেতে পারে, তবে তা যেন হয় টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলকভাবে।’
অবশ্য ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, শুধু এই দেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়লেই হবে না, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যঘাটতি কমতে হবে। এ কারণে চীনের বাজারে আমাদের পণ্য রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘চীন আমাদের বন্ধু দেশ। একইভাবে তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগীও। তবে দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে, সেটা ভারসাম্যে আনা দরকার। চীনে বাংলাদেশি যেসব পণ্য রফতানির সুযোগ রয়েছে সেগুলো যেন সহজেই রফতানি করা যায় তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে ১১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। এই মুহূর্তে চীনে বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি ছিল ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৬৮০ কোটি ডলার এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাণিজ্যঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৮৬ কোটি মার্কিন ডলার।
চীন থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, টেক্সটাইল পণ্য, সয়াবিন তেল, পামওয়েল, টায়ার, সার, গম ও লৌহ এবং ইস্পাত। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে চীন নেয় যেসব পণ্য তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, চামড়া এবং মৎস্য।’
জানা গেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’র উন্নয়ন কৌশল ও রূপরেখায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এবারের সফরের সময়ে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’ যুক্ত হলে সিল্ক রোড ফান্ড (এই উদ্যোগে যুক্ত দেশগুলোর জন্য চীনের সরকারি বিনিয়োগ তহবিল) থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই সফর। তিনি শুক্রবার সকালে কম্বোডিয়া থেকে বাংলাদেশ আসবেন। পরদিন সকালে তিনি ঢাকা থেকে ভারতের গোয়ায় যাবেন।
দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট তার দেশের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন স্টেট কাউন্সিলর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী।
এদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সামনে রেখে সে দেশের উচ্চপর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ও চীনের অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তারা ঢাকায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত আলোচনায় অংশ নেবেন। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন

আরও পড়ুন