টানা তিন মেয়াদে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ট থেকেও সরকার পাহাড়িদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছে
খাগড়াছড়িতে জনসংহতির সমাবেশে বক্তারা
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান ১৯৯৭ সালে সাহস আর সদিচ্ছা নিয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছিলেন; কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেনো ভীরুতার পরিচয় দিচ্ছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করলেও টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কোনই পদেক্ষেপ নেননি। উল্টো ২০১৪ সাল থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। একই সাথে সরকার দেশে-বিদেশে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, ১৫টি আংশিক এবং ৯টি ধারার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান থাকার তথ্য প্রচার করে চলেছেন। অথচ বাস্তবিক অর্থে মাত্র ২৫টি ধারা সম্পূর্ণ, ১৮টি আংশিক বাস্তবায়িত হলেও ২৯টি ধারা এখনো ছুঁয়েও দেখা হয়নি।
আজ শনিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের অদূরে কমলছড়ি পাইলট হাইস্কুল মাঠে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)’ অংশের আয়োজনে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে অনুষ্ঠিত কয়েক হাজার মানুষের এক সমাবেশে পাহাড়ি নেতারা এসব অভিযোগ করেন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আরাধ্য পাল খীসা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জনসংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
তিনি (বিমল) তাঁর বক্তব্যে সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়িরা নিজেদেরকে মনেপ্রাণেই বাংলাদেশী মনে করে। রাষ্ট্রীয় মদদে আমাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী- সাম্প্রদায়িক ও জাতিবিদ্বেষী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে মেনে একটা অর্ন্তভূক্তিমূলক রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতর থাকতে চাই। সেজন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি গভীর বিশ্বার আর আস্থা রেখে দুই দশকের সশস্ত্র জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে এসেছিলেন সমিতির ত্যাগী কর্মীরা। কিন্তু চুক্তির ২৬ বছর পূর্তিতে এসে আমরা দেখছি চুক্তিকে অবাস্তবায়িত রেখেই সরকারিভাবে আনন্দ-উল্লাস করা হচ্ছে। আর পাহাড়িদের গ্রামে গ্রামে দু:খের বন্যা বইছে।
সাবেক এই গেরিলা নেতা (বিমল চাকমা) মন্তব্য করেন, আমরা জীবনের মূল্যবান সময়কে লড়াইয়ের সাথে রেখে চুক্তিতে উপনীত হয়েছি। নিশ্চয়ই নতুন প্রজন্ম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনকে সাহস-সততা-ত্যাগের পথে এগিয়ে নেবেন।
সাবেক ছাত্রনেতা প্রত্যয় চাকমা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে জনসংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংশুমান চাকমা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল, উপজাতীয় ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি রবিশঙ্কর তালুকদার, গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ’র সাংগঠনিক সম্পাদক অমর জ্যোতি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রীতি খীসা, রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জুপিটার চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক জ্ঞানজিব চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্ঞানপ্রিয় চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-র কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা ঝিমিত বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান জটিলতর রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে পুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নপূর্বক বিচারিক কাজ শুরু করা, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বহাল রাখা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদে সাধারণ প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার এবং ক্ষমতা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে হস্তান্তর করা, স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়েভোটার তালিকা প্রণয়ন করে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ সমূহের নির্বাচনের ব্যবস্থা, প্রত্যাগত জনসংহতির সমিতির সদস্যদের যতো দ্রুত সম্ভব যথাযথ পুনর্বাসন করা এবং ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের যথাযথ পুনর্বাসন করার জোর দাবি জানান।