তীব্র গরমে নাকাল অবস্থা পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বাসিন্দাদের। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না সড়কে আর অন্যদিকে তীব্র গরমে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীদের চাপ।
তীব্র তাপদহের সাথে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বান্দরবানের মানুষের জনজীবন। আবহাওয়ার এ বৈরি রূপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দিনে গরমে প্রচুর প্রভাব থাকলেও রাতে ও কমছে না গরমের তেজ। এদিকে গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও সাধারণ পথচারীরা। গত কয়েকদিন ধরেই বান্দরবানের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বান্দরবান সদরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, এবারের গরম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি, যা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়েস।
বাজার করতে আসা মো.জাহাঙ্গীর বলেন, বান্দরবানে এবার যে তীব্র গরম অনুভুত হচ্ছে তা বলার মত নয়। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া এখন কষ্টসাধ্য সকলের জন্য।
তিনি আরো বলেন, পথচারীদের কেউ কেউ বেরিয়েছেন ছাতা নিয়ে। বিশেষ করে শ্রমজীবী আর কর্মজীবীদের জীবন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে নেই থামার উপায়; ঘাম ঝরিয়ে ছুটছেন অনেকেই।
পৌর এলাকার বাসিন্দা মো.আমজাদ জানান,গরমের ছোবলে আমাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা তার উপর আবার বিদ্যুতের লোডশেডিং, বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট সব মিলিয়ে হাহাকার অবস্থা।
এদিকে গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ তাপদহজনিত রোগীর সংখ্যা, এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি।
হাসপাতালে ভর্তি বান্দরবান পৌরসভার বালাঘাটার বাসিন্দা আলফাজ জানান, গরমে কোন কিছু খেয়ে শান্তি নেই। রাতে ভাত খাওয়ার পরপরই প্রচন্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে আর দেরী না করে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
বান্দরবান স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা মো.নুর তার ১০বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রয়েছেন তিনি জানান, বান্দরবানে একদিকে তীব্র গরম আর অন্যদিকে প্রচন্ড বিদ্যুতের লোডশেডিং আর রোগবালাই বাড়ছে।
তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালে বাড়ছে ডাইরিয়া, জ্বর, ঠান্ডা, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এদিকে গরমের এই সময়টা সাধারণ জনগনকে আরো বেশি স্বাস্থ্য সচেতন থাকা এবং যেকোন রোগব্যাধি দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বান্দরবান সদর হাসপাতাল এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মোহাম্মদ ইস্তিয়াকুর রহমান জানান, তীব্র তাপদাহের কারণে মুলত এখন ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে আর বর্হিবিভাগ ও আন্ত:বিভাগে প্রতিদিনই রোগী তুলনামুলক আগের চাইতে বেশি আসছে।
ডা:মোহাম্মদ ইস্তিয়াকুর রহমান আরো জানান, হঠাৎ করে গরম বেশি হওয়ায় এই গরমে কারণে শিশু ও বয়স্করা বেশি রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে আর তাদের এই সময়টা বেশি যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
সিভিল সার্জন ডা: নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, আমাদের ৭টি উপজেলায় আমরা পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করেছি এবং চিকিৎসকদের আমরা বিভিন্ন সভা ও চিঠি দিয়ে সজাগ করে দিয়েছি। তীব্র এই গরমে মূলত ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ আর গরমের পরে যে বৃষ্টি হবে সেটাতে ও জ্বর ও ডায়রিয়া রোগি বাড়বে আর আমরা এই ধরণের চিকিৎসার জন্য সকল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রধানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছি।
তিনি আরো জানান, এই গরমে আমাদের সচেতন হতে হবে বেশি, ঘরের বাইরের খাবার বর্জন, বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান, অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়া, শ্রমজীবিদের যতটুকু পারা যায় নিরাপদ ও ছায়াযুক্ত স্থানে কর্ম সম্পাদন করা এবং শারীরিক অসুস্থাবোধ করলে দেরী না করে চিকিৎসকের শরানাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।