সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। একটানা।কোনো বিরাম নেই যেনো।বৃষ্টির একটানা গান,মাঝে মাঝে পিলে চমকানো বজ্রপাতের আওয়াজ,আর সোদা মাটির গন্ধ।এই চলছে।দক্ষিণের আকাশখোলা জানালাটার সামনে বসে আছি সকাল থেকে।মেঘলা আকাশের রঙ দেখছি… ঘোর ছাই রঙের।বৃষ্টি আমাকে কোনোদিন টানেনি।কিন্তু কেমন জীবন,সেই বৃষ্টির ফাঁদেই বাঁধা পড়ে গেছি।বৃষ্টি আমাকে ধুয়ে দিয়ে যাও,আমি আর সইতে পারিনা।
নিশিতা,মনে পড়ে তোমার,বৃষ্টি তুমি কতটা পছন্দ করতে!টুপটাপ হলেই হলো,তুমি একমুহূর্তও অপেক্ষা করতে না।বৃষ্টি তোমাকে ভিজিয়ে দিত,পুরোটা।ভেজা শুভ্র তোমাকে তখন কি যে সুন্দর লাগত,কি বলবো!
নিশিতা,কখনো তুমি ভেবে দেখেছো,তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে?তোমার পথের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কতোদিন যে কেটে গিয়েছে ,টের পাইনি।তুমি আসতে না।আসলে তুমিতো জানতেই না।তোমাকে একটা বার দেখার জন্য কতো মিনিট ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছি,কখনো গুণতেও যাইনি।তোমার না আসাটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিত।কেনো আসতে না আমার কাছে!
আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু অদিতি।সবসময় বলতো,আমি ভুল করছি।আমার মন মানেনি।বলতাম,আমার ভালবাসা আর যাই হোক ভুল হতে পারেনা।আমি যে তোমাকে কতটা ভালবাসি,তা অদিতি কেমন করে বুঝবে?আমিই বুঝতে পারিনি তোমাকে এতটা ভালবাসি।
তোমার কি মনে পড়ে নিশিতা,আমার সাথে তোমার প্রথম দেখা?ঐ যে আসাদ স্যার এর বাসায়,যখন দুইজনই এস.এস.সি দিতে যাচ্ছি।অনেক ভাল ছাত্রী ছিলে তুমি,অনেক বেশি পড়াশুনায় মনোযোগ।আমি ছিলাম দুষ্টের রাজা।স্কুলে তো আমাকে সবাই একনামে চিনতো।আর তুমি ছিলে লক্ষী মেয়ে।স্যার তোমাকে অনেক পছন্দ করতেন।আমাকে বিন্দু মাত্রও না।সেই প্রথম দিন তোমাকে দেখেই আমার কি যেনো হয়ে গিয়েছিলো।বন্ধুদের কাছে বলাতে সবাই হেসেছিল।এটা নাকি বয়সের দোষ।
আমিও মেনে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু দিন যতো গড়াতে লাগলো,বুঝতে পারলাম,হবেনা।আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।তোমাকে এবার বলতেই হবে।সেইরকম প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলাম।কিন্তু আমাকে অদিতি থামায়।তুমি নাকি এরকম হ্যাংলা ছেলেদের একদমই পছন্দ করোনা।
সেদিন থেকেই আমি বদলে গিয়েছি নিশিতা।মনে আছে,তুমি খুব অবাক হয়েছিলে আমার পরের রেজাল্টগুলো দেখে।তুমি কখনো জানতেও পারোনি,আমার বদলানোর পেছনে তোমাকে পাওয়ার স্বপ্নই ছিল।এস.এস.সি তে তোমার মতোই রেজাল্ট করার পর তোমার সাথে একই কলেজে পরার সুযোগ হয়।সেইদিনগুলো ছিল সবচেয়ে সুখের।তুমি আমার বন্ধু ছিলে নিশিতা।অনেক ভালো বন্ধু।তাই বা কম কি আমার জন্য!
বুঝতে পারিনি নিশিতাকে আমার আগেই অন্য কেউ নিয়ে যাবে।আমাকে দোষ দিওনা তুমি নিশিতা।তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমার ভাগ্যে ছিলেনা তুমি।
নিশিতা জানো,সেইদিনও বৃষ্টি ছিল।সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ এ তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছিল,যেন সদ্য ফোঁটা কুড়ি।অপেক্ষা করছিলাম করিডরে,কখন তুমি আসবে।অদিতি শিখিয়ে দিয়েছিল আমায়।একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার অপেক্ষায়,”নিশিতা আজ আমার হবে।”
না,নিশিতা আমার হয়নি।নিশিতা এসেছিল সেদিন।হাত ধরেছিল অন্য কারো।এতদিনের ভালবাসা,অবুঝের মতো শুধু ভালবেসেই গেছি।কখনো বুঝতে পারিনি,কখন হারিয়ে ফেলেছি আমার নিশিতাকে।
আমি পড়াশুনা ছেড়ে দিইনি নিশিতা।আগের মতোই আছি,তোমার বন্ধু হয়ে,তোমার কাছের মানুষ হয়ে।ভালো লেগেছিল,যখন বলেছিলে আমাকেই প্রথম জানিয়েছ তোমার ভালবাসার কথা।সবসময় দোআ করি,অনেক সুখে থাক তোমার ভালবাসাকে নিয়ে।আমিতো কষ্ট পাবোই,তোমাকে পাইনি যে।না পাওয়ার কষ্ট তো এতো সহজ নয়!
কষ্টগুলো না হয় আমারই থাক…..
তুমি অন্যের হয়ে গিয়েছো নিশিতা,কখনো আমার হবেনা জানি।তোমাকে আর পাওয়ার আশা করিনি কখনো।শুধু আমার বন্ধু হয়ে থেকো।একলা ভালবাসা আমার,সবসময় একলাই থাকবে।তোমাকে দূর থেকে ছুঁয়ে যাবো,তুমি বুঝবেনা।তোমাকে ভালবেসে যাবো,তুমি জানবেওনা।
না জানো।সব ভালবাসা জানতে হয় না।
লেখক-আফরিনা হোসেন রিমু