বান্দরবানের লামা উপজেলার মানুষের মাঝে এক আতংকের মৌসুম বর্ষাকাল। বর্ষায় বন্যা, টানা পাহাড় ধস ও নদী ভাঙ্গনের কারনে নির্ঘুম রাত কাটে পৌর এলাকার ৪০ হাজার মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,টানা বৃষ্টি নামলেই বিশেষ করে পৌরসভা এলাকায় দেখা দেয় বন্যা, পাহাড় ধস, নদী ও খালের দু’পাড় ভাঙ্গন। তখন নদীর তীরবর্তী, নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কারো চোখে ঘুম থাকেনা। কখন বন্যার পানি তলিয়ে দেবে বসতঘর, দোকান, অফিস আদালত এই আতংকে রাত পার করে তারা। বসতঘরের উপর পাহাড় ধসের কারনে পাহাড়ের পাদ দেশে বসবাসকারীরা থাকেন আতংকে। আবার কখন নদী গর্ভে চলে যায় দু’পাড়ে অবস্থিত বসতঘর, ফসলি জমি, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ তিন আতংকে একদিকে যেমন প্রতিবছর জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পুরো বর্ষা মৌসুম জুঁড়েই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় ৪০ হাজার বাসিন্দাকে।
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, বর্ষা শুরু হতেই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্যা আতংক শুরু হয়েছে, প্রতিবছর হঠাৎ বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।
আরো জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দু’কুল উপচে বন্যার সৃষ্টি করে। এসময় পৌর শহরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। লামা-আলীকদম সড়কের একাধিক স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হয় শহরের ব্যবসায়ী, সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রায় সময় বন্যার পানিতে ব্যবসায়িদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
এদিকে লামা বাজার স’মিল এলাকার বাসিন্দা মো. নবীর উদ্দিন জানায়, বর্ষা শুরু হতেই পরিবার নিয়ে আমি শংকিত, এ দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছি আমরা।
অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় চুড়া ও পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় পাহাড় ধস। স্থানীয়দের মতে, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাহাড়গুলো থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ,পাহাড় কেটে বাড়ি-ঘর তৈরি ও বৃক্ষ নিধন করা হয়। এ কারনে বর্ষা মৌসুমে ফাটল ধরা পাহাড়গুলো ধসে পড়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদের ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেই বসবাস করছে।
শুস্ক মৌসুমের মরা নদী মাতামুহুরী বর্ষা এলেই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। অস্বাভাবিক স্রোতের টানে নদীর দু’পাড়ের পৌরএলাকা, লামা সদর ইউনিয়ন এবং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক জনবসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।
এ বিষয়ে লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়, বন্যা মুক্ত ও নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য প্রকল্প গ্রহন করেছেন। আশা করি প্রকল্প মতে কাজ বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।