বান্দরবান রাজার মাঠে শুক্রবার থেকে তিনদিন ব্যাপী বোমাং রাজপরিবারের রাজস্ব আদায়ের অনুষ্ঠান রাজপূণ্যাহ শুরু হয়। আজ শুক্রবার সকালে বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী সৈন্যসামন্ত নিয়ে শহরের রাজ ভবন থেকে মেনে আসেন। এসময় তিনি অতিথিদের নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে পদযাত্রা করে পুরাতন রাজবাড়ির মাঠের মঞ্চে আসন গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড:মো:আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো: শহিদুল এমরান, পুলিস সুপার জাকির হোসেন মজুমদারসহ অনেকে। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড:মো:আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জামাত সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, আমরা করি না । ধর্মের নামে বাংলাদেশে রাজনীতি হবে না । তিনি আরো বলেন,বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে জেলে আছেন কোন রাজনৈতিক কারণে জেলে দেওয়া হয়নি।
আরো জানা গেছে, বছর শেষে রাজপরিবারের এই ঐতিহ্যবাহিবাহী খাজনা আদায় উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ী বাঙ্গালীর মিলনমেলায় পরিণত হলেও, এবছর প্রশাসনিক অনুমতি না মেলার কারনে পূন্যায় মেলার আয়োজন না থাকার কারনে মেলা আয়োজনের আনন্দে ভাটা পড়ে। মেলাকে ঘিরে পর্যটক সমাগমের কথা মাথায় রেখে সাজানা হয় শহরের হোটেল মোটেলগুলোকে কিন্তু অনুমতি না মেলার কারনে লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়িদের।
উৎসবমুখর পরিবেশে এই মেলা উপভোগে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করে বান্দরবানে। ঐতিহ্যবাহী এই রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি স¤প্রদায়ের ১০৯টি মৌজার ১০৯ জন হেডম্যান ও ১ হাজার ৫ শত কারবারী (গ্রাম প্রধান) নিজ নিজ মৌজার পক্ষ থেকে আদায়কৃত রাজস্ব রাজাকে প্রদান করে।
এদিকে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলে প্রশাসনের অনুমতি না মেলার কারনে বৃহস্পতিবার রাতে দূর দূরন্ত থেকে আসা দোকানিরা তাদের প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে চলে যায়, আর কিছু দোকান পুলিশ ভেঙ্গে দেয়।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরো জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান,রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি তিন জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
আরো জানা যায়, বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতির্য্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।
বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ বোমাংগ্রী উ চ প্রু চৌধুরী জানান,আমরা রাজ পরিবার প্রতিবছরই এই রাজমেলা করে থাকি,মেলা আমাদের ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলে। মেলায় আমি বান্দরবানসহ সকল আগত দর্শনার্থীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
প্রতিবছর রাজমেলায় হেডম্যান কারবারী ও অতিথিদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত রাজস্ব খাজনা থেকে ৪২% রাজা, ২৭% হেডম্যান এবং ২১% রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে থাকে, আর বছরের পর বছর ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য রাজপরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবছরে একবার এই রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্টান করা হয়।