শোভাযাত্রা (ফাইল ছবি)
বর্ষবরণকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে নতুন জামা-কাপড় কেনা, ঘর সাজানো, যুবক-যুবতীদের সাজগোজ, পিঠা তৈরীর জন্য দল বেঁধে অর্থ সংগ্রহ করা, বিহারে ছোঁয়াং(খাবার) দান ও ফুল পূজাসহ সর্বোপরি মৈত্রী পানিবর্ষণের বাঁধভাঙা আনন্দ উচ্ছ্বাস সব মিলিয়ে সবকটি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ব্যাপক আয়োজন করছে। তবে মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আর্কষণ হচ্ছে মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলি উৎসব। সকল পাপাচার গ্লানি ধুয়ে-মুছে নিতে মারমা তরুণ তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটান, এসময় মেতে উঠেন আনন্দ-উল্লাসে । সেদিন অলিগলি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় চলে জলকেলি উৎসব।
কিশোর-কিশোরী,তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ এই খেলায় মেতে ওঠেন। এছাড়াও এই উৎসবকে আরো আর্কষনীয় করতে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিধান করে প্রাচীন ও বিলুপ্তপ্রায় খেলাধুলায় মেতে ওঠেন তুরুণ-তরুণীরা। সেইদিন সন্ধ্যায় পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন গলিতে চলে ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরির উৎসব। সন্ধ্যার দিকে ছোট-বড়ো সবাই(বৌদ্ধ ধর্মালম্বী) বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে পূজা করেন, যে যার সাধ্যমতো দান করেন, শীল পালন করেন ইত্যাদি। সন্ধ্যার পর থেকে দল বেঁধে পিঠা তৈরির আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যুবক-যুবতীরা। এসময় নাচে-গানে এই উৎসবকে মাতিয়ে তোলেন তারা।
বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সূত্রে জানা যায়, পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণের মধ্য দিয়ে মারমা সম্প্রদায়ের আগামী ১৩ এপ্রিল (শুক্রবার) শুরু হচ্ছে বান্দরবানে চারদিনব্যাপী সাংগ্রাইং পোয়েহ্ বা জলকেলি উৎসব। এসময়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপিসহ প্রশাসনিক ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন।
প্রসঙ্গত, মারমাদের ভাষায় এ উৎসবকে সাংগ্রাই, চাকমাদের ভাষায় বিজু, ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসুক এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষায় বিসু এবং ম্রোদের ভাষায় চাংক্রান নামে আখ্যায়িত করা হয়।পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান এই সামাজিক উৎসবকে সমষ্টিগতভাবে ‘বৈসাবি’ বলা হয়। এ সময় পাহাড়ের ভিন্নধর্মী বর্ষবরণের এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে।