বান্দরবানের থানচি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বসবাসরত পাহাড়ী সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক পরিবারে খাদ্য ঘাটতির কারনে বাঁশ কুড়ুল খেয়ে বেঁচে আছে। খাদ্য সংকটের ফলে এক দিকে খিদের জ্বালা, অন্যদিকে ভিটামিন এর অভাবে কোমল মতি শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা বৃত্তবানদের সহযোগীতা চেয়েছেন আসন্ন জুমের ধান কাটার পর্যন্ত।
জানা গেচ্ছে, থানচি উপজেলা ১ নং রেমাক্রী ইউনিয়ন ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডে দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায়ের বেশ কিছু সংখ্যক পরিবার অর্থাভাবে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওযায় সিদ্ধ বাঁশকুড়ুল ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামগুলোর মধ্যে বুলু ম্রো পাড়া বিজিবি ক্যাম্পে অধীনের মেনহাত ম্রো পাড়ায় ২০ পরিবার, বুলু ম্রো পাড়া ১৪ পরিবার, টাংখোয়ায় ম্রো পাড়া ১৬ পরিবার, ম্রক্ষ্যং ঝিড়ির পাড়া ৫ পরিবার, কংকং ত্রিপুরা পাড়া ৮ পরিবারসহ প্রায় শতাধিক পরিবারের ৪ শত মানুষের সবার খাদ্য ঘাটতিতে পড়ে পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে সিদ্ধ বাঁশ কুড়ুল খাবার হিসাবে গ্রহন করছে।
সীমান্তের বাসিন্দা বুলু ম্রো কারবারী ও মেনহাত ম্রো কারবারী বলেন, গত বছর জুমের ধান ভালো ছিলনা বৈরী আবহাওয়া কারনে, জুমের ফসল থেকে এক বছরে খাদ্যের যোগান আশানুরুপ পাইনি।
তারা আরও বলেন, বিজিবি আলিকদম জোন অধীনের মোট ৮ টি সীমান্তের আইন শৃংঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে, একটি ক্যাম্পের অধীনে সহযোগীতার জন্য মোট ১৯ টি গ্রাম স্থাপিত হয়েছে। খাদ্যভাবে জনবসতি ছাড়লে বা জনবসতি না থাকলে বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে থাকার পরিবেশ নষ্ট হবে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, এসব এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ জুমচাষে নির্ভরশীল। জুমধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়বে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার।
বাংলাদেশ মিয়ানমার ঘেঁষা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অর্থাভাবে চাল ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকায় সিদ্ধ বাঁশকুড়ুল এক মাত্র ভরসা তাদের। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকায় শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঔষধ সহ একজন নার্স পাঠিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যথাযথ খাদ্য গ্রহন করতে না পারার কারনে শিশুরা কাঁদছে ক্ষিধের জ্বালায়। রান্না করার মত ঘরের কিছু নেই। ঘরের কর্তারা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ধার নিতে যাচ্ছে চাউল। ঘরের ফিরে যেন সন্তানদের মুখে এক মুঠোয় ভাত তুলে দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ জুমের ধান পরিপক্ব হতে না হতে নিয়ে আসছে বাড়িতে। কাঁচা ধান চুলায় সিদ্ধ করে ১ পট চাউলের সাথে বাঁশকুড়ুল সিদ্ধ করে খেতে হচ্ছে প্রতিদিন।
রেমাক্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মাংচন ম্রো মাধ্যমে খাদ্য ঘাটতি কথা জানান, এরপর আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি তৎক্ষনিকভাবে এক মে: টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছে। সে চাউল আজ সোমবার থানচি খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে কালকের মধ্যে পৌছানো ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, সীমান্তে গ্রামগুলে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগও এক প্রকার বিছিন্ন। স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পর ১ মে: টন চাল বরাদ্ধ দিয়ে ৪ টি ইঞ্জিন বোটের মাধ্যমে সেখানে পাঠাতে রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসন্ন জুমের পাকা ধান না কাটা পর্যন্ত ত্রাণের চাল পাঠানো ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবো।
যাতায়াত ব্যবস্থা:
সাংগু নদীর উজানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিয়ানমার ঘেঁষা সীমান্তবর্তীতে এসব এলাকায় পৌছাতে নৌপথে থানচি সদর থেকে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে দুই দিন সময় প্রয়োজন হয়। সেখানে যাতায়াতে ইঞ্জিন চালিত বোটে আসা যাওয়া ৬০ লিটার অকটেন এবং বোট রিজার্ভ করলে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারীভাবে শতাধিক পরিবারের জন্য আসন্ন জুমের ধান কাটার পর্যন্ত সহযোগীতা পেলে ঔসব পরিবারের খাদ্য ঘাটতি কমবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, পাহাড়ে জুম ধানের আবাধ ভালো না হওয়া ও ইদুর বন্যার ফলে ২০১২ সালে বান্দরবানের থানচি, রুমা, রাঙামাটির সাজেক, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ২০১৬ সালের মে মাসে থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়।