ভ্রমণ পিপাসুদের একটি উপভোগ্য পর্যটনের স্থান হতে পারে বান্দবানের রুমা উপজেলার পর্যটনস্পট “তিনাপ সাইতার”। এটি এখনো দেশের পর্যটকদের কাছে তেমন পরিচিতি হয়ে ওঠেনি। তবে খুবই উপভোগ্য পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক ঝর্ণা ধারার এই পর্যটনস্পটিতে রংধনু দেখতে পাওয়া যায় বলে বান্দরবানের “তিনাপ সাইতার’ এখন পর্যটকদের কাছে বেশ আলোচিত পর্যটনস্পট।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অন্যান্য পর্যটন স্থান থেকে এই ঝর্নার বৈশিষ্ট্য একটু আলাদা। সব মৌসুমে এই ঝর্ণার স্বচ্ছ জল ঠান্ডা-গরম, যেন সমানে সমান। তাই সুযোগ পেলেই সেখানে সময় কাটিয়ে আসতে পারেন আপনিও। তিনাপ সাইতার’ নামে এ ঝর্ণাটি বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নের পাইন্দুখালের উপরের দিকে এটির অবস্থান। তবে এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ ভারসাম্যের বিবেচনায় ‘তিনাপ সাইতার’টি পর্যটন স্থান হিসেবে দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের সামনে তুলে ধরতে স্থানীয়দের মধ্যে এখনো মতভিন্নতা রয়েছে। একারণে জন উপভোগ্য হলেও জেলার বাইরের ভ্রমনপ্রেমীদের কাছে তেমন পরিচিত হয়ে উঠেনি।
আরথা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কুছুই খুমি পাহাড়বার্তা‘কে জানান, পাইন্দুখালের এ ঝর্ণার পানি সবসময় স্বচ্ছ থাকে। এপাহাড় থেকে ওপাহাড় হয়ে আঁকা-বাকা পথ বেয়ে আসা এই ঝর্ণা পতিত হয় পাইন্দু খালে। সেখান থেকে প্রায় দেড়শ ফুট উপর থেকে পড়ছে পানি। এই দৃশ্য যেকোন পর্যটককে বিমোহিত করবে। আর এখানে সকাল বেলা সূর্যের আলোয় রংধনুও দেখা মিলে। তাই সুযোগ পেলেই অবসর সময়ে সহকর্মিদের সঙ্গে নিয়ে তিনাপ সাইতার’-এ চলে যাই এবং সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে আসি।
পর্যটক গাইড বেলাল উদ্দিন ও সুমন ত্রিপুরা পাহাড়বার্তা‘কে বলেন তিনাপ সাইতারে যতজন পর্যটক গেছেন, তারা সবাই মুগ্ধ হয়ে ফিরেছেন। কারণ খুব কাছে খেকেই রংধনু দেখতে পান তারা। যেটা অন্য সবখানে কল্পনা করা যায়না।
তিনাপ সাইতার’এ কীভাবে যাবেন? এ সম্পর্কে বেলাল বলেন রুমা সদর থেকে চাঁদের গাড়ি করে দুইটি পথে সহজে যাওয়া যায়। চাঁদের গাড়ি করে ৪৫মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়। আরথাহ পাড়ায় নেমেই হাটতে হবে প্রায় ৪০মিনিট। সেখানে পৌছঁলেই সব কষ্টের কথা ভুলে যাবে-অনায়াসে। পাহাড়ি রাস্তা, সবসময় গাড়ি পাওয়া যায়না।এর জন্য আগেভাবে ঠিক করে রাখতে হবে চাঁদের গাড়ি।
খামিক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান পালিয়ান বম জানান, তিনাপ সাইতার’এ গেলে এক সাথে আরো কিছু উপভোগ করতে পাবেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। তাঁর ভাষ্যমতে, রুমা সদর থেকে সরাসরি চাঁদের গাড়ি করে মুননুয়াম পাড়ায় নামবেন। খাল বেয়ে পায়ে হেটে যেতেই ‘আত্লাই তিলি’ গিয়ে পৌঁছবে। এটাতে জঙ্গলী কলা গাছের বা বাঁশের ভেলা করে পার হতে হবে। এসময় স্বচ্ছ পানিতে আপনার চোখে পড়বে বড় বড় চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আরো চোখে পড়বে যেন ভেলায় ছুটে চলে আসছে মাছ।
ভেলা থেকে নেমেই হাটার ২০মিনিটের মধ্যে গিয়ে পৌছঁবেন ‘রোয়ালদংপা সাইতার’ বা ঝর্ণা।এর উচ্চতাও একশ, দেড়শ ফুটের মতো। উপর থেকে নিচে দেখতে কিছুটা হলেও বুক কেপে উঠে, তবে ভয়ের তেমন কিছুই নেই। এই পাহাড়ি পথ দিয়ে সহজে নামতে পারবেন। পায়ে রূপালী বা ফুজি জুতা থাকলে বেশ হয়।‘রোয়ালদংপা সাইতার’ উপর থেকে নিচে দেখতে যেমন সৌন্দর্য্য, ঠিক তেমনি নিচ থেকেও সেই একই রকম দেখতে পাওয়া পায়।
এখান থেকে সামান্য হাটলে পৌছে যাবেন ‘ঙাথলৌ তিলি’ কুম। এ কুমে আগে অনেক বড় বড় মাছ ছিল। ঝর্ণা ভেদে মাছগুলো এত যে বড় ও তৈলাক্ত ছিল, খেলেই মানুষজন প্রায় সময় মাথা ধরে যেত। এসবের কারণে নামকরণ হয়-‘ঙাথলৌ তিলি’ বা ঙাথলৌ কুম। তারপর ১০মিনিটেই দেখা মিলবে ‘তিনাপ সাইতার’। তবে বিকেল সাড়ে চার রওয়ানা দিলে সূর্য ডুবার আগেই রুমা সদরে আবার এসে পৌছেঁ যাবেন অনায়াসে।