বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর, ফাইতং ও গজালিয়া ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র সংযোগ সড়ক গজালিয়া-আজিজনগর সড়ক। বর্তমানে দূরত্ব কম হওয়ায় আজিজনগর ও ফাইতং ইউনিয়নের লোকজন বিভিন্ন অফিসিয়াল এবং বাণিজ্যিক কাজের জন্য উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন এ সড়ক দিয়ে। ২০ কিলোমিটারের এ সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে ১২ কিলোমিটার কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন হলেও আরও ৮ কিলোমিটারের কাজ এখনো অসম্পূর্ণ ও কাঁচা বেহাল অবস্থায় থেকে গেছে। সড়কটির ওই অংশ শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি আর বর্ষায় কর্দমাক্তের ফলে রোগী, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের যাতায়াত দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া মোটেই সম্ভব হয়না। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সরেজমিন দেখা যায়, গজালিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের মাথা থেকে আজিজনগরগামী ৮ কিলোমিটারের কাঁচা সড়ক। এটির অধিকাংশ জুড়ে উঁচুনিচু গর্তে ভরা। ব্রিজ কালভার্টগুলোরও বেহাল অবস্থা। ব্রিজগুলোর বিভিন্ন অংশের লোহারপাত নেই, যেগুলো রয়েছে সেগুলো আবার কিছু অংশ মাটির নিচে ডুবে রয়েছে। কোনো কোনো ঝিরি কিংবা নালার ওপর কোন ব্রিজ-কালভার্টও নেই। পায়ে হেঁটে এবং গাড়ি নিয়ে ছোট ছোট খালগুলো পাড়ি দিচ্ছে লোকজন। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে এপার থেকে ওপারে আসা যাওয়া করা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালের দিকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে গজালিয়া থেকে আজিজনগর পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনার করা হলেও এরশাদ সরকারের আমনে কাজটি বাস্তবায়ন করা হয়। এর পর থেকে আর কখনো সড়কটি সংস্কার করা হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সড়কটির পাশের রেমং মেম্বার পাড়ার কারবারী মং মং মার্মা অভিযোগ করে জানায়, দীর্ঘ বছর ধরে সড়কটির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা কষ্ট করে পায়ে হেঁটে খাল আর ভাঙ্গাচুরা সড়ক পার হচ্ছি। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। কেউ অসুস্থ হলে তো আর কথাই নেই। শিশু শিক্ষার্থী এখিং মার্মা বলেন, শুস্ক মৌসুমে কোন মতে স্কুলে যেতে পারলেও বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে পানিতে খাল ভরপুর ও কাদায় ভরে যায় সড়কটি, তখন আর স্কুলে যেতে পারিনা।
এ বিষয়ে আজিজনগর ইউনিয়নের চাম্বী মফিজ বাজার এলাকার সেলিম উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, আবদুল মন্নান ও ফাইতং ইউনিয়নের শাহাদাত হোসেন, কবির হোসেনসহ অনেকেই বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে আজিজনগর- গজালিয়া সড়কটির ৮ কিলোমিটার অংশ ধসে পড়ে আর খানাখন্দকে ভরে গিয়ে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানানোর পরও সড়কটির ৮ কিলোমিটার অংশ এখনও বেহাল দশায় পড়ে আছে, সংস্কার করা হয়নি। তাই দ্রুত সড়কটি সংস্কারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে আজিজনগরের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন কোম্পানী ও ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন কোম্পানী একসূরে জানায়, আজিজনগর-গজালিয়া সড়কটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এ সড়ক দিয়েই প্রতিনিয়ত আমাদের ইউনিয়নগুলোর মানুষগুলো উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকে। সেহেতু জনগণের স্বার্থে খুব দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা জরুরী। সড়কটির বাকী অংশ সংস্কারের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের মহোদয়ের সাথে আলাপ হয়েছে বলেও জানান তারা।
আজিজনগর-গজালিয়া সড়কের ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বেহাল দশার সত্যতা নিশ্চিত করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, গজালিয়া-আজিজনগর সড়কের পরিমাপ করে কাগজপত্র উধ্র্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে কাজটি অনুমোদনে কিছুটা বিঘœ ঘটছে। তবে শীঘ্রই কাজটি শুরু করা হবে।
এদিকে লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল বলেন, আজিজনগর-গজালিয়া সড়কের বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উপস্থাপনের পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করেছি। আশা করি খুব শীঘ্রই সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ কাজটি শুরু করবেন।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আজিজনগর-গজালিয়া সড়কের পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনুমোদনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেক -এ পাশ হলেই প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনক্রমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।