সোনা মনি চাকমা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ায় সংবর্ধনা
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার কৃতি সন্তান মহালছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে [বর্তমান নাম মহালছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়] ৯২ সালের এসএসসি শিক্ষার্থী সোনা মনি চাকমা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ায় তাঁর সহপাঠী বন্ধুরা এসএসসি’৯২ ফোরামের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাতে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
গত ১২ এপ্রিল বুধবার মহালছড়ি সদর উপজেলা ক্যান্টিনে কলাম লেখক, এসএসসি ৯২ ফোরামের সভাপতি ঞ্যোহ্লা মং এর সভাপতিত্বে সংর্বধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ফোরামের অর্থ সম্পাদক জটিল বিন্দু চাকমা। এছাড়াও সহপাঠীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুবল বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের উপসচিব রুমি তনচংগ্যা।
জটিল বিন্দু তাঁর স্বাগত বক্তব্যে সকলকে স্বাগত জানিয়ে ফোরাম গঠনের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরে বলেন, “ফোরাম ইতিমধ্যে ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ দিবস উদযাপন করেছে।” তিনি কোন বন্ধুকে কিভাবে খুঁজে বের করেন, সে নিয়েও মজার তথ্য বিনিময় করেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সন্তান সুবল বড়ুয়া তাঁর বক্তব্যে, বাঁশখালী উপজেলার নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন সময়ে সোনা মনি চাকমা সম্পর্কে বাঁশখালী উপজেলাবাসীর প্রশংসার কথা গর্বের সাথে উল্লেখ করেন। এছাড়াও বাঁশখালীতে থাকাকালীন বাঁশখালী উপজেলাকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান।
আনোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে, ৯২ ফোরাম গঠনের সাথে যুক্ত সকল পরিশ্রমী সদস্যদেরকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং আগামীতে ফোরামের ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে আরো সুন্দর সুন্দর উদ্যোগে সাথে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক অংশুমান দেবনাথ। তিনি বলেন, “ফোরাম গঠিত হয়েছে হারানো বন্ধুদের খুঁজে বের করার জন্য। সে লক্ষ্যে আমরা কিছুটা সফলও হয়েছি। আমরা গঠনের পর থেকে কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, তারই একটি অংশ হিসেবে আমরা আমাদের বন্ধু সোনা মনি চাকমাকে অভিনন্দন জানাতে মিলিত হয়েছি। আগামীতে আরো শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সুন্দর সুন্দর কাজ হাতে নিতে চাই। সে লক্ষ্য পূরণে বন্ধুদের সহযোগিতার হাত পেতে চাই।”
উপস্থিত অন্যান্য সহপাঠীরাও ফোরাম গঠনের জন্য সকল উদ্যােগী সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
বিশেষ অতিথি রুমি তনচংগ্যা বলেন, “কর্মজীবনে সোনা মনি চাকমা একজন সৎ, ভালো মনের অফিসার হিসেবে পরিচিত। তিনি আমার পরিচিত, মহালছড়ির গর্বিত সন্তান, একজন পরোপকারী অফিসার হিসেবে পরিচয়ের সুবাদে তাঁর পরিচয় দিতে আমরা নিজেরাও গর্ববোধ করি।”
প্রধান অতিথি সোনা মনি চাকমা বলেন, “প্রায় ৩১ বছর পরে আমরা মিলিত হয়েছি। ইতিমধ্যে অনেকে হারিয়ে গেছে”। হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের নাম উল্লেখ করে তাদের আত্নার শান্তি কামনা করে বলেন, “ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার না থাকলে হয়তো আজ মিলিত হতে পারতাম না। বন্ধুত্বের ওপর আর কোন কিছু হতে পারে না। আমরা একমাত্র বন্ধুর কাছে সব ভালো মন্দ মনখুলে বলতে পারি।” কর্ম জীবনে তিনি ভালো কাজ করার কিছু উদাহরণ টেনে বলেন, “ক্ষমতা দেয়া হয় মানুষকে উপকার করার জন্য, ক্ষমতা মানুষকে সেবা করার, কল্যাণমূলক কাজে ভূমিকা রাখার একটি সুযোগ মাত্র।” পরে তিনি বছরের শেষে সকল বন্ধুদের নিয়ে একটি মিলনমেলা ও পিকনিক আয়োজনের প্রস্তাব রাখেন।
সভাপতি তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “মহালছড়ি একটি পুরাতনতম থানা। উপজেলার সীমানা এক সময় বর্তমান লক্ষীছড়ি উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খাগড়াছড়ি জেলা সৃষ্টির আগে রামগড় ছিল মহকুমা। তার অধীনে মহালছড়ি ছিল একটি থানা। সে প্রশাসনিক কেন্দ্রের সুবাদে মহালছড়িতে পড়ালেখা, জ্ঞান বিজ্ঞান আর নেতৃত্বে অন্য এলাকার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও মহালছড়ির আগেকার শিক্ষিত নেতৃবৃন্দের খামখেয়ালিতে মহালছড়ি নানা বিচারে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষিতরা সামাজিক ও গঠনমূলক কাজে খুব বেশি সময় না দেয়ায় তারা নিরবে বিদায় নিয়েছেন। সমাজও তাদের খুব একটা মনে রাখার চেষ্টা করেনি। সমাজে বেঁচে থাকার জন্য ভালো, সৃষ্টিশীল কাজে সময় ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।” তাই এসএসসি ৯২ ফোরামের সদস্যদের উপজেলার সকল গঠনমূলক কাজে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসার জন্য সকল সদস্যদের প্রতি তিনি আহবান রাখেন।
উল্লেখ্য যে, মহালছড়ি থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে। মহালছড়ি হতে প্রশাসনিক পদে যুগ্মসচিব পদোন্নতি লাভ এটাই প্রথম। ফোরামের সদস্যবৃন্দ এই নিয়ে গর্বিত। সোনামনি চাকমা তাঁর বর্ণময় অভিজ্ঞতা আর সুনামের কারণে আাগামীতে আরো উচু পদে, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন হয়ে ফোরামকে গর্বিত করবেন বলে ফেরামের সদস্যদের বিশ্বাস। সোনা মনি চাকমা সারা দেশে এসএসসি ৯২ ফোরাম, মহালছড়ির প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে বক্তাগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতি ফোরামের দূর-দূরান্তে থেকেও যারা নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে সম্মাননা স্নারক প্রদান করে অভিনন্দন জানানো হয়। একইসাথে সভাপতি ফোরামের তিন পরিশ্রমী সদস্য জটিল বিন্দু চাকমা, অংশুমান দেবনাথ ও রুপম দেবনাথকে ফুল নিয়ে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দিত করেন।
ফোরামের সভাপতি আগামীতে সুবিধাজনক সময়ে আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী, মহালছড়ির কৃতি সন্তান ডক্টর মংসানু মারমাকে নিয়ে উপজেলায় একটি একক বিজ্ঞান বক্তৃতা আয়োজন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।