অসহায় আব্দুস সালামকে রিকশা উপহার দিলেন জেলা প্রশাসক

NewsDetails_01

বান্দরবান সদরের ৮নং ওয়ার্ডের হাফেজঘোনা এলাকায় ভাড়া করা বাসায় থাকেন রিকশাচালক মোঃ আব্দুস সালাম। জীবনের ৩০টি বছর ধরে দুই চাকার প্যাডেল চেপে পরিবারের ভরণ পোষণ করে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন একশ টাকায় গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকার বেশি উপার্জন কখনোই হতো না, মাস শেষে বাড়িওয়ালাকে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। জীর্ণশীর্ণ এই মানুষটিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য পরিবারে উপার্জনক্ষম দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি নেই। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছেলে দুইজন গ্যারেজে মিস্ত্রির কাজ শিখছে এবং মেয়েটি বিবাহিত। আর এবার অসহায় এই মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।

অতীতের অনেক ভালো কাজের ধারাবাহিকতায় এবার রিকশাচালক সালামকেও নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করে দিলেন একটি রিকশা। সালাম এখন একটি রিকশার মালিক,তাকে আর ভাড়ায় করে চালাতে হবে না রিকশা।

বৃহস্পতিবার (১৮নভেম্বর) বিকেলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি মোঃ আব্দুস সালামকে নতুন তৈরিকৃত একটি রিকশা উপহার দেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুৎফুর রহমান,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.কায়েসুর রহমান,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিমন সরকারসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

NewsDetails_03

এসময় অশ্রুসিক্ত সালামের দুচোখ গড়িয়ে পড়া জলে ছিল জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার চরম অভিব্যক্তি। যোগদানের পর থেকে এমনিভাবে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমেই বান্দরবানের জেলা প্রশাসক বুঝিয়ে দিচ্ছেন মানুষের জন্যই প্রশাসন,দেখিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের মানবিক রুপ। বান্দরবান পার্বত্য জেলার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি অসহায় মানুষের টেকসই কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন কারণে সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন,জেলা প্রশাসক সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তায় এসব অসহায় মানুষকে সহায়তা করে থাকেন।তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এনে অসহায়ত্বের লাঘব করেন। বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার সহায়তা ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নেও জেলা প্রশাসক অনেক মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, আর্থিক সাহায্য কখনোই টেকসই হয় না, কারণ দু চারদিনের মধ্যেই এ টাকা শেষ হয়ে গেলে তাকে আবার অসহায় দিনাতিপাত করতে হয়, এ জন্যই শুরু থেকেই সমাজের প্রান্তিক মানুষটিকে যেনো আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হয়ে জীবনধারণ করতে না হয় সেজন্য তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের দিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত,এরআগে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার এক অসহায় প্রতিবন্ধী মোনাফকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে জেলা প্রশাসক তৈরি করে দিয়েছেন একটি দোকান, কিনে দিয়েছেন সেই দোকানের সমস্ত মালামাল। এখন দোকান থেকে অর্জিত আয় দিয়ে স্বাছন্দে জীবনযাপন করছেন তিনি।

এরপরে নিজস্ব অর্থায়নে শাজাহান নামে এক ব্যক্তিকে সালামের মতোই তৈরি করে দিয়েছিলেন একটি রিকশা যেটি এখন তার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন। এছাড়া,মোবাইল সার্ভিসিংয়ে পারদর্শী টংকাবতীর এক প্রতিবন্ধী যুবককে তৈরি করে দিচ্ছেন একটি মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার। সূচি ও কারুশিল্পে পারদর্শী ফাতেমাকে কিনে দিয়েছেন একটি সেলাই মেশিন।

আরও পড়ুন