হিমেল ও তিন্নি। দুইজন দুই ধর্মের হওয়ার কারণে তাদের প্রেমের সম্পর্কে নানা প্রতিবন্ধকতা, হিন্দু প্রেমিক ও মুসলমান প্রেমিকার সামনে এসে দাঁড়ায় ধর্ম। পারিবারিকভাবে দুজনের উপর অকথ্যা নির্যাতনও করা হয়েছে অনেকবার। অবশেষে আত্মহত্যার পথই বেছে নিলেন এই যুগল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়কের বরগাঙ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ হতে এ দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, গত ২৩ জুলাই প্রান্ত দেওয়ানজী হিমেল তার ফেসবুক আইডিতে ‘আল বিদা’ স্ট্যাটাস দেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ছেলেটির নিখোঁজের পরপরই শহরে খবর ছড়িয়ে যায় তিন্নি নামক একটি মেয়েও নিখোঁজ। দুটি পরিবার থেকে অনেক খোজাখুজি করেও তাদের খোজ মিলেনি। তবে এদুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল বলে স্থানীয়রা ধারণা করেন, তারা পালিয়ে গেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়কের বরগাঙ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তাদের দুজনের লাশ ভাসতে দেখে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশটি দুটি উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করেন।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, হিমেল ও তিন্নির সম্পর্কের কথা উভয় পরিবারের লোকজন জানত। এমনকি বন্ধু-বান্ধবরাও পর্যন্ত জানত। ছেলে হিন্দু ও মেয়ে মুসলিম হওয়ায় উভয় পরিবারের লোকজন তাদেরকে এ সম্পর্ক থেকে সরে আসতে প্রায় শাষন করতো। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও চালাত বলে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে জানা গেছে। নিখোঁজ হওয়ার আগের দিনও নাকি ছেলে হিমেলকে পরিবার থেকে মারধর করা হয়েছে বলে জানান তারা। কিন্তু প্রেম মানে না কোন বাঁধা -বিপত্তি। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সম্পর্ক থেকে সরে আসার বদলে দুজনই বেছে নেয়, আত্মহত্যার পথ। যদিও বা উভয় পরিবারের লোকজন সম্পর্ক ছিল এটা স্বীকার করলেও, নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন।
ছেলে প্রান্ত দেওয়ানজী হিমেল (১৮) রিজার্ভ বাজার এলাকার ঔষধ ব্যবসায়ী ছোটন দেওয়ানজীর পুত্র। সে ঢাকা ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের ইন্টার মিডিয়েট ২য় বর্ষের ছাত্র। মেয়ে তাহফিমা খানম তিন্নি (১৮) রাঙ্গুনীয়া উপজেলার শিলক এলাকার শহীদ তালুকদারের মেয়ে বলে জানা গেছে। সে রাঙ্গামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষের ছাত্রী।
রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানার ওসি জাহেদুল হক রনি জানান, প্রেমঘটিত কারণে আত্বহত্যা করতে পারে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আবেগতারিত হয়ে নানা কারণে এমন পথ বেছে নিতে পারে, এই ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু দায়ের করা হবে।