দীঘিনালায় এনটিআরসিএ’র নিবন্ধনের নামে প্রতারণা

অভিযোগ বিনয় কান্তি চাকমা'র বিরুদ্ধে

NewsDetails_01

দেশে যে হারে শিক্ষিত বাড়ছে, সে হারে কর্মক্ষেত্র বাড়ছে না। ফলে অনেকেই বেকার থেকে যাচ্ছে। চাকরি যেন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা শেষ হলেও জুটছে না কাঙ্ক্ষিত চাকরি।

শিক্ষিত বেকাররা চাকরি না পেয়ে যেখানে ব্যর্থ ও উদাসীন। সেখানে এক শ্রেণীর প্রতারক চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে। এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই হচ্ছেন প্রতারিত। এতে অনেকে চাকরি পাওয়ার আসায় উপরি দিতে গিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। এতকিছুর পরেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণটি।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির (শান্তি চুক্তি) পর খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সুবিধার্ধে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য-সহ গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে। স্ব স্ব জেলার শিক্ষিত ও স্থায়ী বাসিন্দাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার কাজও করে জেলা পরিষদগুলো। এতে করে ক’জনের ভাগ্যেইবা মিলছে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি পাওয়া। শিক্ষিত ও মেধাবীদের পছন্দের পেশা শিক্ষকতা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতায় আসতে চায় অনেকে। এসব বিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষক নিয়োগ করা হতো সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে। এতেকরে শিক্ষকরা ইনডেক্সধারী হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এসব সমস্যা সমাধানকল্পে সরকার বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও নিয়োগ প্রথা চালু করে। এক সময় এ বিষয়টি পুঁজি করে এক শ্রেণির দালাল চক্রের আবির্ভাব হয়। তারা তৈরি করে নিজেদের সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেট শিক্ষিত ও মেধাবী বেকারদের টার্গেট করে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিবন্ধন ও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নেয় বিপুল অংকের টাকা।

তেমনি এক প্রতারকের খোঁজ পায় আমাদের প্রতিনিধি। শুরুতে ছদ্মবেশে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তারসাথে। সে পরিচয় দেয় তার নাম বিনয় কান্তি চাকমা। সে দীঘিনালা মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। অল্প কথার মাঝেই সে বলে যে, পাঁচ লক্ষ টাকা দিলে উপজেলার যেকোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে দিবে৷ এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেয়। আমাদের প্রতিনিধি পুনরায় যোগাযোগ করে তার সাথে। সাক্ষাৎ’এ দেখা করতে চাইলে রাজি হয় সে। এরপর ছদ্মবেশে তারসাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ’এ সে জানায়, এনটিআরসিএ’র ঢাকা অফিসে তার সরাসরি যোগাযোগ আছে। সে দীঘিনালার অনেকেই নাকি চাকরি নিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকের অচিরেই হয়ে যাবে৷ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এডভান্স করতে হবে৷ বাকিটা চাকুরি হওয়ার পর। টাকার জামানত হিসেবে ব্যবসায়িক টাকা হাওলাতের দলিল হবে। (ভিডিও রেকর্ড রয়েছে)

NewsDetails_03

পরবর্তীতে সাংবাদিক পরিচয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে সবকিছু অস্বীকার করে৷ তাছাড়া প্রতিনিধিকে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, তাদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনকে চাকরি দেওয়ার নামে জনপ্রতি দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা করে প্রায় অর্থ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিনয় কান্তি চাকমা।

এছাড়াও ব্যবসার কথা বলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ হাওলাত নিয়ে সে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দীঘিনালার কাজী হাবিব উল্লাহ রানা বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে ব্যবসার কথা সে ১৫ লক্ষ টাকা হাওলাত নেয়৷ যার দলিলাদী ও প্রমাণপত্র আমার হাতে আছে। যথাসময়ে হাওলাতের অর্থ পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছি।

তবে বিনয় কান্তি চাকমা’র বিষয়ে জানতে চাইলে দীঘিনালা মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন মনি চাকমা বলেন, সে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নয়। একসময় এ প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করলেও ২০১৭ সালে তাকে এ বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আমার কাছেও দু’জন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। তার কোন কর্মকাণ্ডের দায়ভার আমাদের বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিবেনা।

দীঘিনালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দীঘিনালার কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি কোন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে৷ তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

আরও পড়ুন