নাইক্ষ্যংছড়ির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ !

NewsDetails_01

সহকারি শিক্ষিকা আলমাছ আক্তার
তদন্ত কমিটিকে বিস্তারিত ঘটনা ব্যাক্ত করছেন
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভাল্লুকখাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষিকাকে শ্লীলতাহানি, কর্মস্থলে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অন্যায়ভাবে কমিটি বাতিলসহ বেশ কিছু অভিযোগের কারনে তাকে প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী নির্যাতন, একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের উপর হামলা ও নারী শিক্ষিকাকে অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ থাকার কারনে এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করেছেন উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গঠিত শিক্ষা কমিটির তিন সদস্যের টিম।
স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ইতোপূর্বে ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। জামিনে এসে চাকুরীতে পুনঃবহালের পর তাঁর অনৈতিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে তিনি হত্যা মামলাসহ অন্তত ৬টি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।
স্কুলের নারী অভিভাবক জয়গুন বিজি, সোস্তফা খাতুন, রশিদা বেগম, হাজেরা খাতুন জানান, বির্তকিত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামকে স্কুল থেকে প্রত্যাহার করা না হলে তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে আসা বন্ধ করে দিবেন।
তাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্কুলে যোগদানের পর নানা বির্তকের সৃষ্টি করে স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। প্রধান শিক্ষক স্কুলে শিক্ষার উন্নয়নের চেয়ে নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত থেকেছেন সবসময়। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসও অভিযুক্ত নুরুল ইসলামের বিষয়ে নিরব থেকেছেন।
অভিভাবক হাসিনা বেগম, মমতাজ বেগম জানান, প্রধান শিক্ষকের নির্যাতনের কারনে ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে চান না। স্কুল থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করা না হলে ছেলে মেয়েদের আর স্কুলে পাঠাবেন না।
স্কুল কমিটির পিটিআই সভাপতি ফরিদুল আলম বলেন, “গত বিশ বছর পিটিআই সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি কিন্তু আমি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি তাঁকে মিথ্যা একটি মামলার আসামী করা হয়েছে বলে দাবী করেন।
ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ইছহাক জানান, দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করেন প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। কমিটি বাতিলের বিষয়ে তাঁকে কিছু জানানোও হয়নি।
স্কুলের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর দুই ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম প্রায় সময় ক্লাসে তাদের শরীরে হাত দেন। বাথরুমে পানি নিতে বলে কয়েকজন ছাত্রীকে যৌন হয়রাণি করারও চেষ্টা করেন। যদিওবা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সহকারী রফিক তাঁর উপর হামলা করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে দাবী করেন তিনি।
এছাড়াও বির্তকিত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই স্কুলের নারী শিক্ষিকাকে অনৈতিক প্রস্তাব ও সহকারী শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সম্প্রতি বান্দরবান জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বির্তকিত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার সেনের নেতৃত্বে তদন্তটিমের অন্য দুই সদস্যরা হলেন, উপজেলা প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন ও মৎস্য অফিসার জাহাঙ্গির আলম।
তদন্তকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের তাঁরা বলেন, “উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশক্রমে শিক্ষা আমাদের তদন্তভার দিয়েছেন”। প্রকৃত ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অবিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন- “তদন্তে প্রাথমিক ভাবে কিছু বলার সুযোগ নেই, আমরা যা পেয়েছি তা উপস্থাপন করব”।

আরও পড়ুন