বান্দরবানের চাষীরা প্রথমবারের মত গম চাষ শুরু করেছে

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার হরিনঝিড়ি এলাকায় গম চাষ করছে কৃষকরা
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাকে তামাকের রাজ্য বলা হয়। পাহাড়ের খাদে খাদে যেসব জমিতে একসময় সবজি উৎপাদন করে কৃষকেরা পরিবার চালতো এখন বেশি লাভের আশায় সে জমিতেই চলছিল তামাকের চাষ। আর এই তামাক থেকে চাষীদের ফিরিয়ে রবিশস্য উৎপাদন বাড়াতে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে গম চাষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান সদর,লামা,আলীকদম,রোয়াংছড়ি,থানচি,রুমা,নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলাতে একসময় উৎপাদিত হত বিভিন্ন কৃষি পন্য, কিšু‘ বেশ কয়েক বছর থেকে এসব উপজেলার জমিগুলোতে শুরু হয় ক্ষতিকর তামাক চাষ। আর কৃষকেরা বেশি লাভের আশায় সবজি উৎপাদন বন্ধ করে শুরু করে তামাক উৎপাদন।
লামার গম চাষী ক্য সাইন শৈ বলেন, আমরা আগে তামাক চাষ করতাম, নিজেদের সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। তার তুলনায় তেমন লাভের মুখ দেখতামনা, এখন তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে প্রথম বারের মত গম চাষ করেছি।
আরো জানা গেছে, জেলায় কৃষকের তামাক চাষ বন্ধ করে প্রথমবারের মত গম গবেষণা কেন্দ্র ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের বাস্তবায়নে কৃষকদের ক্ষতিকর তামাক চাষ বাদ দিয়ে প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় গম চাষ। আর প্রাথমিক ভাবে এই গম চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষক।
তামাক ছেড়ে প্রথম বারের মত গম চাষী জবুরং ম্রো বলেন, গম চাষে তেমন কোন কষ্ট নাই অতি সহজে চাষ করা যায়, এবার গম চাষ করে ভালো লেগেছে।
কৃষকেরা জানান, এই প্রথমবার কারিতাসের পক্ষ থেকে সহজশর্তে পর্যাপ্ত গমের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরী, ঔষুধ ও কৃষি সরঞ্জামের সরবরাহের কারণে গম চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন তারা, আর স্বল্প সময়ে চাষ করে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকেরা গমে চাষে ঝুঁকছে।
আলীকদমের গম চাষী নাইতিং প্রু বলেন,গমের তেমন কোন রোগ বালায় না থাকার কারণে অতি সহজে আমরা চাষ করেছি, যদিও বা এটি আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ কারিতাস জানায়, জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলায় ২০ জন চাষীকে প্রণোদনার মাধ্যমে এই গম চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিভাবে লামা উপজেলায় ১০০ শতক জমি ও আলীকদম উপজেলায় ৫০ শতত জমিতে এই গম চাষ উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং কৃষকেরা গম চাষ করে লাভবান হচ্ছে।
কারিতাস বাংলাদেশের কর্মসূচী কর্মকর্তা রুপনা দাশ বলেন, আমরা প্রথম বারের মত কয়েক জন কৃষকদের নিয়ে তামাকের পরিবর্তে চাষ হিসেবে গম চাষ শুরু করেছি। আমরা আশা রাখছি আগামীতে লামা আলীকদমের কৃষকরা তামাকের পরিবর্তে গম চাষ করবে।
আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্র,গাজীপুর,ঢাকার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলম ফারুক বলেন, তামাক চাষ না করে গমের পাশাপাশি এক জমিতে ৩ টি ফসল চাষ করতে পারবে, ফলে আগামীতে বান্দরবানের যে সমস্ত জমিতে বর্তমানে তামাক চাষ হচ্ছে সে সমস্থ জমিতে গম চাষ বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা জানান, তামাক কোম্পানির প্যাকেজে মাধ্যমে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ কৃর্ষক,আর ফসলি জমি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি। তাই কৃষকদের সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে গম উৎপাদন করে পার্বত্য এলাকায় গমচাষ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)সানজিদা বিনতে সালাম বলেন, গমে চাষে কৃষকদের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবাবনা থাকে না। এবার যদি চাষ ভালো হয় তাহলে আগামীতে আমরা তাদের প্রনোদনার মাধ্যমে গম চাষটা বৃদ্ধিতে কাজ করবো।
পার্বত্য এলাকায় এই গম চাষ সম্প্রসারণ হলে এলাকায় গম উৎপাদন বাড়বে আর কৃষকেরা ক্ষতিকর তামাক ছেড়ে গম আবাদে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টদের।

আরও পড়ুন