অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে করোনা চিকিৎসা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় বান্দরবানের স্বাস্থ্য বিভাগ !

লাগবে ১ হাজার, আছে মাত্র ৯৩টি

সম্প্রতি বান্দরবান জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা সেবার প্রস্ততি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যে। বান্দরবানের ৪ লক্ষ মানুষের বিপরীতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে মাত্র ৯৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, সে হিসেবে বান্দরবান জেলায় প্রতি ৪ হাজার ৩০১ জন মানুষের জন্য রয়েছে ১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার!

সুত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলার সরকারী হাসপাতালে ৯৩ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে ৪৫টি, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি পাওয়া নতুন ১০টিসহ ২০টি, আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮টি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি, রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮টি, রোয়াংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮টি এবং থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। বান্দরবান সদর হাসপাতালের ৪৫টি সিলিন্ডারের মধ্যে রোগীকে দেওয়ার উপযোগী রয়েছে মাত্র ২১টি।

জেলায় স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য ৮০ জন চিকিৎসক ও ৯০ জন নার্স রয়েছে। সে হিসেবে গড়ে প্রতি উপজেলায় ১০ জনের বেশি চিকিৎসক ও ১৩ জনের বেশি নার্স থাকলেও প্রতি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সে পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই।

বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দা এ্যাড. আবু জাফর বলেন, হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ বাড়ানো উচিত। করোনা আক্রান্তরা যাতে হাসপাতালে গিয়ে অন্তত অক্সিজেনটা পায়। কারন, বাইরের জেলাতে আমরা দেখেছি অক্সিজেনের অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মারা যাচ্ছে, তাই সময় থাকতে এটা নিয়ে সমন্বয় করা প্রয়োজন।

বান্দরবানের আরেক বাসিন্দা মো:আবু তালেব বলেন, বান্দরবানে যে হারে সংক্রমক বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা যদি আরো বাড়ে তাহলে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ দিতে কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে, তাই সময় থাকতেই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো.জসীম উদ্দীন বলেন, বান্দরবানের ১০০ শয্যার হাসপাতালে একসাথে রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার জন্য ২১টি পরিপূর্ণ সেট রয়েছে, কারন শুধু সিলিন্ডার থাকলে হবে না। একজন রোগীকে অক্সিজেন দিতে হলে নল মিটার, ফ্লো মিটার, সিলিন্ডার হোল্ডারসহ একটি সেট প্রয়োজন হয়, আমাদের রয়েছ মাত্র ২১সেট।

তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে এখনো অক্সিজেন দেয়ার মত করোনা রোগীর চাপ তেমন নেই, তাই এখন সমস্যা হচ্ছে না, তবে করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে যদি করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ে এবং সে ক্ষেত্রে যদি অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয় তখন আমরা হিমশিম খাব।

NewsDetails_03

একই চিত্র বান্দরবানের উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডা. মোহাম্মদুল হক জানান, আমাদের ৫০ শয্যা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জন্য ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার যথেষ্ঠ। তবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যদি বাড়ে এবং তাদের যদি অক্সিজেন দিতে হয় সেক্ষেত্রে ৫০টি সিলিন্ডার দিয়েও কাজ হবে না। কারন করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীকে দিনে ৫ থেকে ৬ সিলিন্ডার অক্সিজেন দিতে হবে।

বান্দরবান করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীকে যদি অক্সিজেন দিতে হয় সেক্ষেত্রে জটিল একজন রোগীকে মিনিটে ১০থেকে সর্বোচ্চ ৬০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হতে পারে। সে হিসেবে একজন রোগীর জন্য ২৪ ঘন্টায় ৮টি সিলিন্ডার প্রয়োজন হবে, ফলে ৩জন রোগীকে সাপোর্ট দেয়ার মত অক্সিজেন সিলিন্ডার ও নেই।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত এসব জটিল রোগী বান্দরবান সদর হাসপাতালে আসলে তাদের আমরা চট্টগ্রামে রেফার করে দেই।

বান্দরবান করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা আরো জানান, তবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সামনে আমরা রেফার করতে পারব কি না জানি না, কারন কোথাও জায়গা নেই। তাই এখন আমাদের উচিত নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা।

এ বিষয়ে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মারমা বলেন, আমাদের বান্দরবান জেলায় ৯৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে, স্বাভাবিক সময়ের জন্য এগুলো ঠিক আছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যদি বাড়ে সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে। শতকরা ৫ ভাগ রোগীকেও যদি অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন পরে তবে আমরা সেটা দিতে পারব না। এ মুহুর্তে অক্সিজেনটা খুব জরুরী।

তিনি আরো বলেন, ১ হাজার সিলিন্ডারের চাহিদা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, পার্বত্য জেলা পরিষদকে বলেছি, এমনকি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনারকে জানিয়েছি।

সিভিল সার্জন ডা.অং সুই প্রু মারমা আরো বলেন, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা যারা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কাজ করে তাদেরও বলেছি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়ার জন্য, কিন্তু দু:খজনক হলে ও সত্যিই এখনো কোন নতুন অক্সিজেন সিলিন্ডার আমরা পাইনি।

বাংলাদেশের ৩০০নং সংসদীয় আসন বান্দরবান। ৭টি উপজেলা,২টি পৌরসভা আর ৩৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ৪ হাজার ৪৭৯.০৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত পার্বত্য এ জেলা। সরকারী সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৪ হাজার ৯৩ জন।

আরও পড়ুন