আলীকদমে ৮ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার ৮০৭টি গরু ও মহিষ আটক

বিজিবি

purabi burmese market

বান্দরবান জেলার আলীকদম ৫৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, চোরাচালান নির্মূলে ব্যাটালিয়ন কর্তৃক নিয়মিত টাস্কফোর্স ও যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। নিয়মিত অভিযানে গত ৬ মাসে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৮০৭টি গরু মহিষ আটক করা হয়েছে। আটককৃত গরু মহিষ নিলাম সরকারী কোষাগারে জমা করা হয়েছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা। এছাড়া এ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি ৩ কোটি ৬ লাখ ৬২ হাজার ৫৯০ টাকার অবৈধ কাঠ আটক করেছে।

অবৈধ গরু আটকের বিষয়ে এ পর্যন্ত ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, তন্মধ্যে ০২টি মামলা থানায় এবং ২৪টি কাষ্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই জন আসামীকে গ্রেফতার করে থানায় সোপার্দ করা হয়।

গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে আলীকদমস্থ ৫৭ বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এইসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দেশের ৪,১৫৬ কিঃ মিঃ ভারত এবং ২৭১ কিঃ মিঃ মায়ানমারের সাথে মোট ৪,৪২৭ কিঃ মিঃ সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। তম্মধ্যে কক্সবাজার রিজিয়ন দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ-মায়ানমারের সম্পূর্ণ সীমান্তসহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেরও দায়িত্ব পালন করছে।

এই সীমান্তের মধ্যে বান্দরবান সেক্টরের ৩টি ইউনিটের মধ্যে আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) মায়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছে। দেশের দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষায় দায়িত্ব নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে ব্যাটালিয়নটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাটালিয়ন সদর আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত হলেও ব্যাটালিয়নের সাথে সবগুলো ক্যাম্প থানচি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নের দূর্গম জনমানবহীন অঞ্চলে অবস্থিত। ব্যাটালিয়নের অধিকাংশ জনবল বিওপি সমূহে অপারেশনাল কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকেন। পাশাপাশি আলীকদমের সাথে মায়ানমারের ৩৩ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষায় ব্যাটলিয়ন সচেষ্ট রয়েছে৷ প্রতিষ্ঠার পর হতে এই ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান নির্মূলের পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে।

সম্প্রতি আলীকদম উপজেলার মধ্য দিয়ে মায়ানমার হতে গবাদি পশু চোরাচালান অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। চোরাকারবারীরা পাহাড়ি ঝিরি পথ ও নদী পথ ব্যবহার করে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে গবাদীপশু নিয়ে এসে লামা-ঈদগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায় গরু নিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার করে আসছে এবং ইতিমধ্যে দুই মাদক পাচাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত আলীকদম উপজেলার দূর্গম সীমান্ত এলাকা হয়ে পোয়ামুহুরী ও কুরুকপাতা এলাকার বিভিন্ন ঝিরিপথ দিয়ে চোরাকারবারীরা গবাদিপশু নিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় চোরাচালান নির্মূলে “ক্রিলাই পাড়া অস্থায়ী যৌথ চেকপোস্ট” স্থাপন করে চলতি বছরের ০১ জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

dhaka tribune ad2

চোরাচালান শুধু অত্র এলাকার ভারসাম্য নষ্ট নয় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর ফলে সরকার একদিকে যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেই সাথে দেশীয় খামার শিল্প আজ হুমকির মুখে। চোরাচালানকৃত এই গরুগুলো অধিকাংশ ক্ষুরারোগসহ বিভিন্ন রোগাক্রান্ত যার ফলে দেশীয় খামারসহ অন্যান্য গবাদিপশুতে তা ছড়িয়ে পড়ছে। বিজিবি এবং অন্যান্য সহযোগী সংস্থা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই গবাদিপশুর চোরাচালান হচ্ছে। প্রতিদিন গবাদিপশুসহ অন্যান্য চোরাচালানী দ্রব্য আসছে বলে জানা যায়। এই চোরাচালানী কার্যক্রমের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষদের কাজে লাগিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ এবং দুস্থ জনগণ যারা চোরাচালানীর সাথে জড়িত তাদের বিরত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব খামার করার ব্যাপারে যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন তা বাস্তবায়নকল্পে আলীকদম উপজেলায় নিজস্ব খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন পূর্বক চোরাচালান হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শহীদুল ইসলাম। তবে কিছু দুষ্কৃতিকারী ও চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত এবং সুবিধাবাদী লোকেরা বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের এই অভিযান ব্যাহত করতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমাদের সকলে মিলে এই ষড়যন্ত্র রোখে দিয়ে চোরাচালান নির্মূল করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মাদক ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে ‘‘জিরো টলারেন্স” নীতি বাস্তবায়নে বিজিবির মহা পরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনায় বিজিবি সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। অত্র এলাকা দিয়ে গবাদিপশুর পাশাপাশি মাদক চোরাচালানের সম্ভাবনা রয়েছে। বিজিবির এই আভিযানিক ও অপারেশনাল কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য কিছু চোরাকারবারী ও দুষ্কৃতিকারী বিজিবির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ৫টি মামলা দায়ের করে। মামলা সমূহ বিজিবি আইনগতভাবে মোকাবেলা করছে, যা ইতিমধ্যে আদালত কর্তৃক কয়েকটি মামলায় বিজিবির পক্ষে রায় দিয়েছে এবং কয়েকটি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।

অত্র ব্যাটালিয়ন কর্তৃক ব্যাটালিয়নের পার্শ্ববর্তী গরীব অসহায় জনসাধারণ ও দূর্গম সীমান্তে বসবাসকারী পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রায় ৫,৮০০ জনকে মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। এছাড়াও ব্যাটালিয়নের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় দ্রারিদ্র ও অসহায় জনসাধারণ এবং দূর্গম বিওপি সমূহের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ৩,১১৬টি পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল), শাড়ী ও লুঙ্গী বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাটালিয়নের দায়িত্বাধীন বিওপি সমূহে দূর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারীদের সাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে বিজিবি’র পক্ষ থেকে গবাদীপশু প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবান জেলা, লামা ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।