পরিপক্ক কলাছড়া রুমা বাজারে বিক্রি করতে এনেছে ৪টি। মোট দাম মাত্র ৬০০ টাকা। যা আগে বেচা যেত মাঝারি সাইজের পরিপক্ক কলাছড়া তিনটির দাম ১০০-১২০০ টাকা। কষ্ট করে চাষ করা কলার এতো কম দাম পাওয়ার কারনে
লাভ হয়ে যাবে বেপারির। এ লকডাউন আরো কতো কষ্ট দেবে বলতে পারছি না। কেন এভাবে লকউন দিতে থাকে বারবার আমি জানি না। এইসব কথা বলছিলেন বাগান চাষি কংশালা ত্রিপুরা(৫০)। তার বাড়ি বান্দরবানের রুমা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে বৈথানী পাড়া।
আজ সোমবার (১৯) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রুমা বাজার মারমা লাইনে একটি দোকানের বারান্দার ছায়ায় দাঁড়িয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় চাষি কংশালা ত্রিপুরার সঙ্গে। সোমবার সাপ্তাহিক হাটের দিন। তাই ওইদিন সকাল থেকে কলাছড়া বিক্রি করতে রুমা বাজারে আসছিলন সে।
বাগান চাষি কংশালা ত্রিপুরা এ প্রতিবেদককে বলেন, সোমবার হাটের দিন বাজারে লকডাউন বলে জানতাম না। তাই ভোর থেকে পাহাড়ি রাস্তা নামা-উঠায় পায়ে হেটে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই থ্রুঙে (বাঁশের তৈরী ঝুড়ি) করে কলাছড়া পিঠে বহন করে আনছিলাম কিন্তু বাজারে পৌঁছেই লোকজন জানাইলো, দ্বিতীয় ধাপে করোনা ভাইরাসের লকডাউন চলছে, গাড়ি চলবেনা, গাড়ি তো বড় কথা না। ক্রেতা বেপারি খোঁজতে গিয়ে আমার বড় চারটি কলাছড়া দেখে দাম দিতে চাইলো- চারশত টাকা। দর কষাকষি করে কোনো রকমে ছয়শত টাকায় বিক্রি করেছি বেপারিকে। এটা নাহলে তরিতরকারি ঘরের জন্য কিছু নিয়ে যেতে পারবো না।
এসময় পাশে পাড়ার প্রতিবেশি জাকুপ ত্রিপুরা (৩২) হাতেরুং ত্রিপুরা(৫৬) সহ বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে ও বসে ছিলেন। হাতেরং ত্রিপুরা। সে উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত পাড়া কেন্দ্রতে প্রারম্ভিক শিশু শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন পাড়া কর্মী হিসেবে।
সে জানায় আজ (১৯ এপ্রিল) সোমবার থেকে লকডাউন বিষয়টি আগে থেকে জানি। তবে তার স্বামী অসুস্থতার কারণে বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনার জন্য যেতে পারছেন না। তাই হাঁতেরুং নিজে বহন করে একটি কলাছড়া নিয়ে আসছিলেন বাজারে। সেটি বিক্রি করতে হয়েছে ৩০০ টাকায়। আগের বারে এটির সমান একটিতে ৬৫০ টাকা কিনেছিলেন-বেপারিরা।
তার ভাষ্যমতে, ক্যম্বওয়া পাড়া, পূনর্বাসন পাড়া ও তার বাসস্থান বৈথনি পাড়ার মিলে প্রায় ১৫-২০ লোক একই রাস্তায় কলার ছড়া নিয়ে এসেছিলেন সকালে। তারাও সব কলার ছড়া অর্ধেকের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে বাড়িতে ফিরে গেছেন বলে জানালেন হাঁতেরুং ত্রিপুরা।
তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখেন ক’জনের হাতে মাস্ক থাকলেও অপর দুই মহিলার মুখে মাস্ক নেই। তাদের মাস্ক মুখে দিতে বলায় তারা বলতে লাগল- তোমার মুখে থাকলে হল, আমাদের অভ্যাস নেই, গরম লাগে। এসময় আমার ডান পাশে চুপ করে বসে থাকা আরেক নারী হাত দেখিয়ে জানায়, উনি আমাদের কলাগুলো কিনেছে। পিছনে তাকালে এ প্রতিবেদক দেখতে পান সাদা শার্ট পরিহিত, হাতে ছাতায় ততখনে কাছে এসে দাড়ালেন সেই কলাছড়া ক্রেতা লোকটি। নাম খুল্লুমিয়া (৬৭)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশের ডিজিটাল ল্যাবের পিছনে।
তিনি এব্যবসায় বিগত ১২ বছর যাবত করে আসছেন। একারণে কলা চাষিরা নারী-পুরুষ সবাই তাকে চিনে। জানতে চাইলে খুল্লুমিয়া বলেন, আজ (১৯এপ্রিল) কলার ছড়া আসছে বেশি। তবে দাম কমছে কুড়না (করোনা) ভাইরাসের কারণে।
তিনি আরো বলেন, কম টাকা নিয়ে আসছি, বেশি কিনতে পারলাম না, ৫০ ছড়া কিনলাম- চার হাজার টাকায়। আরো কিনবে কিনা জাানতে চাইলে খুল্লু মিয়া বলেন, গত বছরের (২০২০) লকডাউনে সব টাকা শেষ। এখন বাড়িতে দেনা কর্জ্জ অনেক। বেশি ব্যবসা করতে পারছেন না বলে জানালেন তিনি। তবে কম দামে কেনার কথা এড়িয়ে যান খুল্লু মিয়া।
এ লকডাউনে কলাছড়া পাঠাতে গাড়ি ভাড়ার খরচ বেশি, লাভ হয় না। এজন্য বেশি দামে কেনা বেচা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন খুল্লু মিয়া।