করোনা রুখতে বান্দরবানের পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ভিন্নধর্মী লকডাউন

করোনা থেকে সচেতন হতে প্রশাসনের প্রচার প্রচারনার তৎপরতা জেলার দূর্গম এলাকাগুলোতে না পৌছলেও মোবাইল ফোনের রিং টোন এর বার্তা ও আদিবাসী নেতাদের ফোনে নির্দেশনা পেয়ে জেলার দূর্গম এলাকার পাহাড়ী পল্লীগুলো স্ব প্রনোদিত হয়ে লকডাউন করছে পাহাড়ীরা। আর এনিয়ে এস বাসু দাশ এর বিশেষ প্রতিবেদন।

সূত্রে জানা গেছে, একদিকে করোনা, অন্যদিকে হাম, দুই মহামারী রোগ নিয়ে যুদ্ধ করছে বান্দরবানের মানুষ। আর এরি অংশ হিসাবে জেলার দূর্গম এলাকাগুলোর আদিবাসীরা এই ছোঁয়াছে রোগ এড়াতে নিজেরাই তাদের নিজ নিজ পাড়া লক ডাউন করেছে।

এই ব্যাপারে ম্রো স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি রুমক্লাম ম্রো পাহাড়বার্তা’কে জানান, আমাদের সংগঠনের ছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন পাড়ায় করোনা ও হাম প্রতিরোধে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি এবং পাড়া লক ডাউন করছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার চিম্বুক পাহাড়ের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত ২০টি পাড়া, পূর্বদিকের ৩০টি পাড়া, টংকাবতী ইউনিয়নের ১৭টি পাড়া। আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা, সদর ইউনিয়ন, চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন, রুমা উপজেলার প্রাংসা ইউনিয়ন, রুমা সদর। থানচির সব ইউনিয়ন, লামা উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়ন, সরই ইউনিয়ন, গজালিয়া ইউনিয়ন, সদর ইউনিয়ন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে করোনা ও হাম প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ পাড়া লকডাউন করছে। তাদের মধ্যে ম্রোং লং পাড়া, নোয়াপাড়া, বসন্ত পাড়া,ক্রামাদি পাড়ায় পাহাড়ীরা তাদের পাড়ার প্রবেশদ্বারে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরী করে হাতে লেখা নোটিশ ঝুঁলিয়ে দিয়েছে।

চিম্বুক এলাকার বসন্ত পাড়ার বাসিন্দা পাসিং ম্রো পাহাড়বার্তা’কে বলেন, রোগ থেকে বাঁচতে আমরা নিজেরাই নিজেদের পাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে পাড়ার প্রবেশদ্বার বন্ধ করেছি।

আরো জানা গেছে,বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি পাহাড়ী জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ের পাড়া-গ্রামে অনেক আগে থেকে প্রথাগত ভাবেই সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পেতে কয়েকদিনের জন্য পাড়া বন্ধ নিয়ম চালু রয়েছে। পাড়া বন্ধের সময়ে পাড়াবাসী ছাড়া বাইরের কাউকে পাড়ায় থাকতে দেওয়া হয় না। পাড়াবাসীও ওই সময়ে বাইরে কোথাও যান না। বিশেষ করে কোথাও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, আশঙ্কা থাকলে এ রকম পাড়া বন্ধ করা হয়। অনেকটা এখনকার লকড ডাউন, শাট ডাউনের মতো।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ম্রো নেতা সিং ইয়ং ম্রো পাহাড়বার্তা’কে বলেন, আদিবাসীদের সামাজিক প্রথায় পাড়া বন্ধ করার নিয়ম আগে থেকেই আছে, করোনা ও হামের কারনে বিভিন্ন পাড়াবাসী তাদের পাড়ায় প্রবেশে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

বান্দরবান জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে জেলায় প্রশিক্ষন দিয়ে ৩শ সেচ্ছাসেবক নামানোর পাশাপাশি ৩০ হাজার দু:স্থ পরিবারকে ৩শ মেট্রিক টন চাউল,ডাল ও তেল প্রদান করা হবে। অন্যদিকে হাম ও করোনা রুখতে স্বাস্থ্য সেবার জন্য জেলার সিভিল সার্জনকে হামের জন্য ১ লক্ষ ও করোনার জন্য ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

এই ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা পাহাড়বার্তা’কে বলেন, জেলার দূর্গম এলাকায় করোনা সচেতনার জন্য সেচ্ছাসেবক পাঠানোর পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ বান্দরবানের লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি লাইল্যা মুরুং পাড়ায় হাম রোগে শিশু-কিশোরসহ ৩৪ জন আক্রান্ত হয় এবং এই রোগে দুতিয়া ম্রো (৭) নামের এক শিশু মারা যায়। পরে সেনাসদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা ৩৩ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে করোনা ভাইরাস আতংকে কার্যত বন্ধ রয়েছে পাহাড়ী পল্লীগুলো।

আরও পড়ুন