খাগড়াছড়িতে টানা ২৭ বছরের নির্বাহী প্রকৌশলী তিনি, গত ৮ বছর ধরে আছেন বান্দরবান। এক ব্যক্তি ! আছেন ২টি জেলার দায়িত্বে,একই সময়ে কখনও কখনও আবার কক্সবাজারেরও দায়িত্ব পালন করেন। প্রবাদ আছে, হাকিম নড়ে,হুকুম নড়েনা। কিন্তু আমরা বলছি এমন এক নির্বাহী প্রকৌশলীর কথা, যার বেলায় এই প্রবাদ যেন ঠিক তার উল্টো। অনেক ক্ষমতা তাঁর, আমরা যার কথা বলছি তিনি আর কেউ নন, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন। তাইতো সব নিয়ম ভঙ্গ করে একই কর্মস্থলে রয়ে গেছেন রেকর্ড সময়। খাগড়াছড়িতে ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯, কেউ তাঁকে নড়াতে পারেনি, এমনকি ব্যর্থ ক্ষোধ ঢাকা অফিসও।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও যেন জিম্মি সোহরাব হোসেনের ক্ষমতার কাছে। সর্বশেষ ১১ জুলাই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. খাইরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে পদায়ন করে খাগড়াছড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি সোহরাব হোসেন। এর আগেও তাঁকে বদলি করেও সরানো যায়নি।
জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমানের অফিস আদেশ নিয়ে গত ১৬ জুলাই খাগড়াছড়িতে যোগদান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. কামাল হোসেন। একই সঙ্গে খাগড়াছড়ি বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সোহরাব হোসেনকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় একই তারিখের অপরাহ্নে দায়িত্ব থেকে অপব্যাহতিপ্রাপ্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সরকারের প্রজ্ঞাপন ও অফিস আদেশ অমান্য করে দায়িত্ব হস্তান্তর থেকে বিরত থাকেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে গত ২৮ মে সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনকে নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে বান্দরবানে পদায়ন করা হয়। সেই জেলায়ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী (অ.দা.) সোহরাব হোসেন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি।
খাগড়াছড়িতে পদায়নকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জানান, তাঁকে প্রথমে বান্দরবানে ও পরে খাগড়াছড়িতে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে অফিস আদেশ দিলেও সোহরাব হোসেন দায়িত্ব ছাড়ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর এ কে এম হুমায়ন কবির নামে এক সহকারী প্রকৌশলীকে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়। তখনো তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি সোহরাব হোসেন। তাঁর ক্ষমতার ব্যাপ্তি এতটাই যে পার্বত্য দুই জেলা ছাড়াও কক্সবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বও তিনি পালন করেন দীর্ঘদিন।
খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ঠিকাদার মো. আলমসহ বান্দরবানের ঠিকাদাররা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে নানা দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ার শঙ্কা থেকে সোহরাব দায়িত্ব ছাড়ার সাহস পাচ্ছেন না।
মূলত পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী ন্যস্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদকে অবহিত করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, সোহরাব হোসেন পরিষদকে মেনেজ করে নানা প্রক্রিয়ায় সেই সুযোগ নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সব আদেশ, নিয়ম-কানুন ও প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন এ ব্যাপারে জানান, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত একটি সরকারি সংস্থা। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে কাউকে পার্বত্য জেলায় বদলি করলেও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রহণ না করলে তাঁর পক্ষে এখানে দায়িত্বভার নেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্যই খাগড়াছড়ি বা বান্দরবানে বদলি হয়ে আসা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনের কাছে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেননি।
সোহরাব হোসেন আরো বলেন, গত ৮ বছর এ সময় তিনি আরও বলেন, চাকরিজীবনে আমি এর আগে বান্দরবানের দুর্গম রুমা থানচিতে কাজ করেছি। দীর্ঘদিন কক্সবাজারের তিন উপজেলায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু পার্বত্য এলাকায় বিচক্ষণতা নেই এমন অজুহাতে আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি।
খাগড়াছড়িতে পদায়নকৃত মো. কামাল হোসেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে যোগদানপত্র দাখিল করলেও জেলা পরিষদ তা গ্রহণ করেনি। উল্টো গত ২৫ জুলাই এক পত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী সোহরাব হোসেনের পক্ষে সাফাই গেয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দেন।