দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করতে প্রচারণায় আলীকদম আওয়ামী লীগ সভাপতি!

NewsDetails_01

এ যেন বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় আওয়ামী লীগের চিরচেনা রাজনীতি। জাতীয় নির্বাচন থেকে উপজেলা, এমনকি এবার ইউপি নির্বাচনেও প্রকাশ্যে বা গোপনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চিরচেনা খেলা যেন থামছেই না। ফলে যে কোন নির্বাচনে উপজেলাটিতে বারবার পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের নেতাদের বিরোধীতায় এবারও যেন এর ব্যতিক্রম হবেনা, এমন ধারণা স্থানীয়দের।

“ফেরদৌসকে ভোট দিতে হবে না, সবাই ঘরে গিয়ে ঘুমায়ও, সে অযোগ্য প্রার্থী” বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত রবিবার (৭ নভেম্বর) চৈক্ষ্যং রাস্তার মাথা, চিনারীর দোকান ও আবাসিকসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চায়ের দোকানে বসে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভাজন ও সাধারণ ভোটাররা নৌকা বিমুখ হচ্ছে। খোদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চায়ের দোকানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট না দিতে বলা’কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষরা। সভাপতির এমন মন্তব্য চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পরিষদের নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্তব্য করেন, প্রতিপক্ষের কাছে বিপুল ভোটে হারবে ফেরদৌস রহমান। ফেরদৌস চেয়ারম্যান সাধারণ মানুষের মন জয় করতে পারেনি। তোমরা এখন ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক,যখন আমি নির্দেশ দেব তখন মাঠে নামবে।

প্রত্যক্ষদর্শী নেতারা বলেন, তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককেও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বকাঝকা করেছেন বলে জানান।

তারা আরও বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির প্রকাশ্যে এমন মন্তব্যে নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সাধারণ নেতাকর্মীরা নৌকা ভোট চাইতে গিয়ে লজ্জিত হচ্ছে। কোন মুখ নিয়ে এখন আমরা সাধারণ ভোটারের কাছে ভোট চাইতে যাব?

চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের এক সহযোগী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চিনারী বাজার চায়ের দোকানে বসে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করেছেন, তিনি (মংব্রাচিং মার্মা) যখন নির্দেশ দেবেন তখন নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। এখন ঘরে ঘুমিয়ে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

NewsDetails_03

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, তাকে বকাঝকার বিষয়টি সত্য।

তিনি আরও বলেন, আমি (জামাল উদ্দিন) নৌকার প্রার্থী পক্ষে কাজ করলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকা প্রতিকের পক্ষে কাজ করবেন না, বলে হুমকি দিয়েছেন। কেন তিনি এমন আচরণ করেছেন তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে কথা বলে জানাব। প্রকাশ্যে নৌকা প্রতিকের বিরোধিতা করায় নির্বাচনে কোন প্রভাব কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মোঃশফিউল আলম বলেন, একজন উপজেলার শীর্ষ নেতার এমন মন্তব্যের আমরা বিব্রত হচ্ছি। নৌকার পক্ষে যারা ছিল, তারাও এখন নৌকার বিপক্ষে অবস্থান করছে।ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে প্রকাশ্যে দোকানে এমন মন্তব্য আশা করিনি। সবজায়গা এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছে।

এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মংব্রাচিং মার্মাকে মুঠোফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন। এর পর ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করতে চাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান বলেন, দোকানে বসে নেতাকর্মীদের আমার পক্ষে কাজ না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন ও সমালোচনা করেছেন বলে ঘটনা স্থলে থাকা নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার কোন ভূল থাকলে শুধরাতে নির্দেশনা দিতে পারতেন কিন্তু প্রকাশ্যে এমন মন্তব্যের পর অনেক ধরনের প্রক্রিয়ার হচ্ছে নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে। নির্বাচনের সময় এমন মন্তব্য প্রতিপক্ষ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ও করবে। নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন বলে জানান, চৈক্ষ্যং ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দুংড়িমং মার্মা বলেন, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী তার বিরুদ্ধে দোকানে মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এবিষয়ে কোন প্রমাণ না থাকায় জেলাকে এখনও জানায়নি। যাদের সামনে বলেছেন ও স্থানীয় নেতাদের কিছু বক্তব্যের রেকর্ড আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেকর্ড গুলো না শুনে আমি মন্তব্য করতে পারবনা। প্রকাশ্যে চায়ের দোকানে বসে নেতাকর্মীদের নৌকায় ভোট না দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রত্যক্ষ সাক্ষীর পর কি আর কোন প্রমাণ প্রয়োজন হয় ও এত নেতাকর্মী কি মিথ্যা বলছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কল কেটে দেন।

আরও পড়ুন