খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় স্থলবন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম ভূমি জটিলতায় আটকে আছে। ফেণী নদীর উপর নির্মাণাধীন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ চালু থাকলেও বন্দরের কাঠামোগত অন্যান্য কাজ এখনও শুরু হয়নি।
সরেজমিনে রামগড়ের মহামুনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ফেণী নদীর উপর মৈত্রী সেতু ১ এর কাজ চলছে। ভারতের অংশে কাজের পাশাপাশি বাংলাদেশের রামগড় অংশেও সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান। সেতুর কাজ চললেও পাহাড়ের প্রথম স্থলবন্দরের অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন কাজ চোখে পড়েনি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থল বন্দর ও সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমির মালিকানা দাবি করে একজন আদালতে রীট করেছে। এ কারণে আদালতের নির্দেশে অধিগ্রহণকৃত ভূমির অন্যান্য মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ অংশে স্থল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে রামগড় মহাকুমা দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুমের যোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতার পর তা বন্ধ হয়ে গেলেও দীর্ঘবছর পর বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ভারতের সেতুবন্ধন তৈরী হচ্ছে রামগড় স্থল বন্দর। ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৈত্রী সেতু ১ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর শুরু হয় দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে বন্দরের কার্যক্রম নিয়ে একাধিক বৈঠক।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ফেণী নদীর খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম অংশে ১শ ২৮ কোটি ৬৯ লক্ষ ভারতীয় মুদ্রায় ৪১২মিটার দৈর্ঘ্যরে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুর নির্মাণ কাজ ও বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শনে রামগড় পরিদর্শন করেন সদ্য বিদায়ী বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, বাংলাদেশের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বিদায়ী নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। মৈত্রী সেতুর কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ অংশে স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কথা থাকলেও ভূমির মালিকানা সমস্যায় হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় আটকে আছে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া।
খাগড়াছড়ি জেলা চেম্বারস অব কমার্সের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নবদিগন্ত উন্মোচিত করবে মৈত্রী সেতু ১ ও রামগড় স্থলবন্দর। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নৌ ও বিমান বন্দরের সুবিধা ব্যবহার করে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়ীক কাছে অর্থ ও সময় সাশ্রয় করতে পারবে। এছাড়া দুই দেশের পর্যটন খাতও বিকশিত হবে। তাই দ্রুত সমস্যা সমাধান করে বন্দরের কার্যক্রম শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থলবন্দর ও সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড তৈরীর জন্য ২.৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রশাসনের কাছে থাকলেও আদালতের নির্দেশে বিতরণ করা যাচ্ছে না। আইনী জটিলতা শেষ হলে ক্ষতিপূরণে অর্থ প্রদান শেষে বন্দরের অবকাঠামোগত কার্যক্রম শুরুর কথা জানান তিনি।