পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের সোনালী ধান কাটার উৎসব

NewsDetails_01

বান্দরবানের পাহাড়ী পল্লিতে চলছে জুমের ধান তোলার ধুম পড়েছে, ফলনও হয়েছে বাম্পার। পাহাড়ের উঁচুনিচু জমিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে সোনালি রঙের ধান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন সবুজের বুক জুড়ে সোনালি ধানের হাসি।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হলো জুমচাষ। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর কিছু ফসল তারা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের ব্যয় মিটিয়ে থাকেন।

প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমের ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রথমে পাহাড়ে আগুন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা হয়। তার পর জমি খনন করে বীজ বপন করা হয়। বীজ লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষ হয় অক্টোবর মাসে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। বান্দরবান সদরের থানচি-রুমা সড়কের সাতমাইল, বারোমাইল, গ্যৎসিমনিপাড়া, দানিয়েলপাড়া, শৈলপ্রপাত এলাকাসহ, চিম্বুক পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা গেছে জুমিয়া পরিবারগুলোর ব্যস্ততা।

NewsDetails_03

পাহাড়ী পল্লিগুলোতে শেষ মুহূর্তে চলছে এখন জুম কাটার উৎসব। ছেলে বুড়োসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে। ফসল ঘরে তুলতে সকাল-দুপুর ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

জুম চাষি রিং রো ম্রো জানান, বছর শেষে অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছ-পালা-বন-জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। গাছ-গাছালি পরিষ্কার করার পর জুম চাষে উপযোগী করে তোলা হয় স্থানটি। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে বিভিন্নরকম বীজ বপন করা হয়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব। তবে একটি স্থানে একবারই জুম চাষ করা হয়। পরের বছর জুমচাষ করার জন্য নতুন পাহাড় খুঁজে নেন চাষিরা।

চিম্বুকপাড়ার জুম চাষি ইয়াং ম্রো জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় জুমের ফসল ভালো হয়েছে। নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে ভালো টাকাও আয় করতে পারব। এ মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে জুমের ফলন খুবই ভালো হয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর বান্দরবানে ৮ হাজার ৯শ ৭৮ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৮ টন। গত বছর আবাদ করা হয় ৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদিত হয় ১৭ হাজার ১৩৮ টন ধান।

বান্দরবানের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেছেন, বান্দরবানে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। শস্যে ঠিকমতো পানি নিশ্চিত হওয়ায় ফলনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন