বন্যায় আলীকদমের কৃষকের মাথায় হাত !
গত মঙ্গলবার রাতে বন্যার পানি কমে গেলেও আজ সকাল থেকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের আলীকদমের মাতামুহুরি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সামনের আলীকদম-চকরিয়া সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। ভারী ভর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় কাঁচা মালের দামও নিম্নমুখী।
আজ বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে নিচু এলাকাগুলোতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে আবারও।
কৃষকরা জানিয়েছে,বন্যায় দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে ফসলের জমি, ফলে ফসল পঁচতে শুরু করেছে। নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে ফসলসহ কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি। পানি শিগগিরই নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, বরং সকাল থেকে পানি ফের বাড়ছে, ফলে এসব ফসল তোলার কোনো আশাও নেই। সেসব এলাকা প্লাবিত হয়নি সেসব এলাকার কৃষিপণ্য বাইরে নিতে না পারায় উচিত দাম পাচ্ছে না কৃষক।
এদিকে ফসল হারিয়ে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। বেশির ভাগ কৃষক এনজিও, ব্যাংক অথবা চড়া সুদে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণে টাকা এনে ধানসহ বিভিন্ন সফল আবাদ করেছে। এখন বন্যায় ফসলহানিতে তারা দুই চোখে অন্ধকার দেখছে।
স্থানীয় কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, আমার চার কানি ধান পানিতে ডুবে গেছে। আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ধান লাগিয়ে ছিলাম। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে ধান ও অন্য চাষাবাদ করেছে । এখন ঋণের টাকা শোধ করব কেমন করে ? খাবও কেমন করে, চিন্তায় আছি ।
উপজেলার চিনারী বাজারের শহিদুল আলম বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকায় ২ একর জায়গায় পেঁপে বাগান ছিল কিন্তু বন্যায় পুরো বাগানটিই পানির নিচে।নিজের সব পুঁজি এখন পানির নিচে।
অপর কৃষক আশেকউল্লাহ্ বলেন, ধানের চারা রোপণ করেছি কিন্তু বন্যায় সব পানিতে চলে গেছে, সাথে একটি ২২/২৩ ঘোড়া পানির মেশিন এখনও পানিতে। বন্যায় পুকুর ডুবে গেছে, সব মাছ চলে গেছে। বন্যা সবকিছু শেষ করে দিয়েছে আমার।
চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান বলেন,চৈক্ষ্যং ইউনিয়নে প্রায় ১ কোটি টাকার সফল নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা একেবারে পথে বসে গেছে, অনেক পরিবারের ঘরে খাবারও নেই।
তিনি আরও বলেন, আজ (বুধবার) সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু পারছি সহায়তা করছি।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সায়েদ ইকবাল জানান, নিম্নাঞ্চলের যেসব ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে তাদেরকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। যেসব কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে গেছে তাদের জন্য সরকারি ভাবে কোন নির্দেশনা এখনো আসেনি। তালিকা তৈরী ও প্রণোদনা দেওয়ার নিদের্শনা আসলে, অবশ্যই তা দেওয়া হবে।