বান্দরবানের হোটেল-মোটেলে নেই বুকিং, হতাশ ব্যবসায়ীরা

প্রতিবছর ঈদ, নববর্ষ আর পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করতে সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের ভীড় জমতো বান্দরবানে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংকে হামলা,অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনায় আতংক সৃষ্টি হওয়ায় এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে বান্দরবানে পর্যটকের বুকিং নেই। পর্যটক সমাগম কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

শান্তি সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত বান্দরবান, যেখানে সুউচ্চ পাহাড়, ঝর্ণা,মেঘ আর আকাশের সৌন্দর্য্য ও অবিরাম ছুটে চলা নদীর সৌন্দর্য্য বিমোহিত করে যেকোন পর্যটককে। সরকারী যেকোন বন্ধে তাই বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আর পর্যটকবাহী যানগুলো বুকিং হয়ে যেত কয়েকদিন আগে থেকে। তবে এবারে ভিন্ন চিত্র বান্দরবানে। পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল কুচি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের হঠাৎ তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবারের ঈদের টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের বুকিং নেই বান্দরবানে। এদিকে পর্যটকদের বুকিং না পাওয়ায় ক্ষতির আশংকায় হোটেল মোটেল আর রিসোর্টের ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবান সদরের আবাসিক হোটেল গ্র্যান্ড ভ্যালীর ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন জানান, বান্দরবানে সারাবছরই পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকতো তবে গত কয়েক বছর ধরে পর্যটক নেই। পর্যটক না থাকায় বিপুল ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা পড়ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আমাদের কোন রুম বুকিং হয়নি।

বান্দরবান সদরের আবাসিক হোটেল হিলটন এর ম্যানেজার মো.আক্কাস জানান, হোটেল হিলটন এর ৮৫টি রুমের মধ্যে এবারের ঈদে কোন রুম বুকিং হয়নি। প্রতিবছর ঈদ উল ফিতর ও ঈদ উল আযহার বন্ধে হোটেল মোটেলে রুম পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়তো তবে এবার চিত্র ভিন্ন, পাহাড়ের অবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটকরা আসতে ভয় পাচ্ছে।

এদিকে হোটেল মোটেল আর রিসোর্টের পাশাপাশি বুকিং নেই পর্যটকবাহী যানবাহন গুলোতে। ঈদের বন্ধে এমন হাহাকার অবস্থায় হতাশ পর্যটকবাহী যানবাহনের মালিক আর শ্রমিকেরা।

বান্দরবানের পর্যটকবাহী গাড়ীর চালক মো.কামাল জানান, আমাদের গাড়ীগুলো এখন আর আগেরমত ভাড়া হয় না, এক সময় ঈদের ছুটির কয়েকদিন আগে বুকিং হয়ে যেত বেশিরভাগ পর্যটকবাহী গাড়ী তবে এবারের ঈদেও বুকিং নেই একটিও ।

NewsDetails_03

বান্দরবানের পর্যটকবাহী গাড়ীর চালক মো.আলমগীর বলেন, বান্দরবানের রুমা,থানচি ও রোয়াংছড়িতে সন্ত্রাসীদের আনাগোনার সংবাদে অনেক পর্যটক বান্দরবানে আসতে চাইছে না। পর্যটক না থাকায় অনেকে পর্যটকবাহী গাড়ীগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে।

পর্যটকবাহী গাড়ীর চালক মো.আলমগীর আরো বলেন, আমাদের দাবি পর্যটকদের বান্দরবানমুখী করতে প্রশাসন দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সাংগঠনিক সম্পাদক মো.জসীম উদ্দিন বলেন, গতবছর থেকে পর্যটক কমে গেছে। পর্যটক কমে যাওয়ায় আমাদের আবাসিক হোটেলগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা ২৫-৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ও পর্যটক পাচ্ছি না।

বান্দরবান মাইক্রোবাস জীপ পিকআপ মালিক সমবায় সমিতি এর লাইন পরিচালক মো.কামাল বলেন, বান্দরবানের মাইক্রোবাস জীপ পিকআপ মালিক সমবায় সমিতির আওতায় প্রায় ৫শতাধিক পর্যটকবাহী যানবাহন রয়েছে, প্রায় সময় পর্যটকবাহী যানগুলো বুকিং থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের ভ্রমনের প্রবণতা কমে গেছে। এবারের ঈদের ছুটিতে আমাদের গাড়ীগুলো একটি ও অগ্রীম বুকিং হয়নি আর এতে আমাদের মালিক ও চালকেরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

এদিকে পর্যটকরা যাতে অনায়াসে বান্দরবানে ঘুরতে পারে তার জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান জোন এর ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ বলেন, বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় কিছুটা সমস্যা থাকলেও অন্যান্যস্থানে পর্যটকেরা অনায়াসে ঘুরে যেতে পারবে। পর্যটকেরা চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশ এর সহায়তার মাধ্যমে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমন করতে পারবে।

আরও পড়ুন