বান্দরবানে ইমামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেন জঙ্গির পিতা

ছেলে জঙ্গীবাদে জড়িত

ছেলেকে জঙ্গীবাদে জড়িত করায় এবার এক হতভাগ্য পিতা মসজিদের ইমামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে বান্দরবানে মামলা দায়ের করেছে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ জঙ্গী আল আমিনের পিতা নুরুল ইসলাম।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে বান্দরবান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে এই মামলা দায়ের করেন তিনি। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: ইমরান মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য রুমা থানাকে নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা হলেন, কুমিল্লা জেলার মোখলেছুর রহমানের ছেলে আনিসুর রহমান (৩২), শামীন মাহফুজ (৪৭), নারায়ণগঞ্জের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন (৩৪), সিলেটের হাফিজ মাওলানা হোসাইন এর ছেলে আব্দুল্লাহ মায়মুন (৩৪), সিলেটের মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে মাসকুর রহমান (৪৪), সুনামগঞ্জের ছৈয়দ আবুল কালাম এর ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক (৩১), আব্দুল কাদের, কুমিল্লার মমতাজ আহম্মেদ এর ছেলে শাহ মোহাম্মদ হাবিুল্লাহ। বান্দরবানের রুমা উপজেলার জাওতন লনচেও এর ছেলে নাথানা লনচেও বম (৫০), লাল মোহন বিয়াল ওরফে কর্ণেল সলোমান (৫০), ভাংচুর লিয়ান (৪৩)। এদের মধ্যে তিন জন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সামরিক শাখার কর্মকর্তা।

মামলার এজাহারে বাদী বলেন, গত ২৫ আগস্ট তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে তার ছেলে বাড়ী থেকে বের হয়। এরপর থেকে ছেলের আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পারে স্থানীয় কুবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর প্ররোচনায় বিভিন্ন মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহীন অরণ্যে আশ্রয় নেয় এবং প্রশিক্ষণ নেয়াকালীন তার ছেলে রুমার গহীন জঙ্গলে মারা গেলে অন্যান্য জঙ্গীরা তাকে সেখানে কবর দেয়। সে খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কবর পাওয়া গেলেও সেখানে ছেলের মরদেহের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাই তিনি যারা তার ছেলেকে ভূল বুঝিয়ে এ জঙ্গিবাদের পথে নিয়ে এসে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে তাদের সকলকে শাস্তির আওতায় আনতে মামলা দায়ের করেন।

নব্য জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল সারকিয়ার ৫৫ জন সদস্য পাহাড়ী সংগঠন কেএনএফ এর সহযোগিতায় পার্বত্যাঞ্চলের দূর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত অক্টোবর মাস থেকে বান্দরবানে শুরু হয় জঙ্গী বিরোধী অভিযান। গত ৫ জানুয়ারী বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে প্রশিক্ষণরত ৫ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রুমা উপজেলায় সুয়াংলুয়াম পাড়া এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আল আমিন নামে এক জঙ্গীর মৃত্যু হলে তাকে সেখানেই দাফন করে অপর জঙ্গীরা। পরে গত রোববার হেলিকপ্টারে করে লাশ উদ্ধারে র‌্যাব অভিযান চালালে সেখানে কবরের সন্ধান পাওয়া গেলেও মরদেহের খোঁজ মেলেনি।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী সংগঠন ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে গত ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও এখনও জেলার থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।