বান্দরবানে ৪৫ একর পাহাড় কেটে সাবাড়
এ যেন পাহাড় কাটার মহোৎসব !
পৃথিবীর লোহ দণ্ড বলা হয় পাহাড়কে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় যার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এর ওপর ভর করেই প্রকৃতি তার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অথচ এক শ্রেণির প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে বান্দরবানের সেই পাহাড়গুলোকে সাবাড় করছে। জেলা সদরের টংকাবতি ইউনিয়নে হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন করে পাহাড় কেটে সাবাড় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে শমসু ইসলাম নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। আর এনিয়ে এস বাসু দাশ এর প্রতিবেদন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার ৫ নম্বর টংকাবতি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিন হাঙ্গর এলাকায় শফিকুর রহমান পাড়া এলাকায় প্রায় ৪৫ একর পাহাড় কাটা হয়েছে। শ্রমিকরা স্কেভেটর দিয়ে গত ৬ মাস ধরে দিনে রাতে সমান তালে একের পর এক পাহাড় কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তৈরী করেছে, রাস্তা, লেক ও সমতল ভূমি। বিভিন্ন পাহাড়ের আরো কিছু অংশ কেটে সমান করার বাকি আছে মাত্র।
টংকাবতি ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন পাহাড়বার্তা’কে বলেন, শমসু ইসলাম এলাকায় বেশ প্রভাবশালী, তাই তিনি আইনের তোয়াক্কা না করেই একের পর এক পাহাড় কাটছে।
সুয়ালক- চিম্বুক সড়কের নারিকেলের দোকানের দক্ষিণে সফিকুর রহমান পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে সুউচ্চ পাহাড় কেটে বেশ কয়েকটি রাস্তা তৈরি করেছেন। আরও একটু ভিতরে গেলেই দেখা মেলে পাহাড় আর বন নিধনের কর্মযজ্ঞ। আগেই কাটা হয়েছে একাশিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার বৃক্ষ। প্রায় ৪৫ একর উঁচু-নিচু সবুজ অরণ্য ঘেরা পাহাড় কেটে সড়ক ও বিভিন্ন প্রজেক্ট নির্মান করেছেন শমসু ইসলাম।
বান্দরবান সদর উপজেলার ৫ নম্বর টংকাবতি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিন হাঙ্গর এলাকায় শফিকুর রহমান পাড়া এলাকায় কাটা হয়েছে পাহাড়। ছবি-পাহাড়বার্তা
এই ব্যাপারে পাহাড় কাটার ঘটনায় অভিযুক্ত শমসু ইসলাম পাহাড় কাটার বিষয়ে কোন ছাড়পত্র প্রতিবেদককে দেখাতে না পারলেও তিনি বলেন, আমি ৬ মাস ধরে অনুমতি নিয়ে পাহাড় কেটেছি, এখন পাহাড় কাটা শেষ।
আরো জানা গেছে, স্থানীয় শমসু ইসলাম এলাকায় বেশ প্রভাবশালী, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড় পত্র না নিয়ে একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে। জনশূন্য এলাকাটিতে কোন বসবাস না থাকলেও পাহাড় মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তৈরী করা হয়েছে বিশাল সড়ক, আরও তৈরী করা হয়েছে বড় বড় বেশ কয়েকটি লেক, যেখানে করা হবে মৎস প্রজেক্ট, সেখানে গড়ে তোলা হবে খামার।
পাহাড় কেটে মৎস প্রজেক্ট করার বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিৎ শীল এর সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরো জানা গেছে, পাহাড় কেটে সাবাড় করার পর অবৈধ পাহাড় কাটাকে বৈধ করতে তারা তোড়জোর শুরু করে। আর এরি অংশ হিসাবে গত বছরের ৬ নভেম্বর ৬ নং টংকাবতি ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার নুর কবির স্বাক্ষরিত এক পত্রে দেখা যায়, এই সড়ক সংস্কারের জন্য ৫নং টংকাবতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো (প্রদীপ) এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে জোর সুপারিশ করেন।
বান্দরবান সদর উপজেলার ৫ নম্বর টংকাবতি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিন হাঙ্গর এলাকায় শফিকুর রহমান পাড়া এলাকায় কাটা হয়েছে পাহাড়। ছবি-পাহাড়বার্তা
তবে এই ব্যাপারে আবেদনকারী ৬ নং টংকাবতি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নুর কবির পাহাড়বার্তা’কে জানান, আমি কোন আবেদন করিনি, বিশাল পাহাড়ী এলাকাটিতে হাজার হাজার গাছ থাকলেও তা পাহাড়সহ কেটে সড়ক ও লেক তৈরী করা হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি, আধা-সরকারি, সায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এটি অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফের একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ জরিমানা গুণতে হবে।
এই ব্যাপারে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফখর উদ্দিন চৌধুরী পাহাড়বার্তা’কে বলেন, সেখানে মৎস প্রজেক্টের অনুমতি নিয়েছে কিন্তু পাহাড় কাটার অনুমতি নেই, আমরা কয়েকদিনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই বিষয়ে মামলা করবো।